বিজ্ঞাপন
default-image

কাজী নূরুজ্জামান ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার পর তিনি দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়ায় যান। সেখানে ৪ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া বিদ্রোহী বাহিনীগুলোর কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্রোহী বাহিনীগুলোকে একটি কমান্ড চ্যানেলে এনে সমন্বিতভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের আলোকে তিনি দায়িত্ব পান মুক্তিবাহিনীর কেন্দ্রীয় দপ্তরে। মুক্তিবাহিনীর পুনর্গঠন-প্রক্রিয়ায় তিনি নানা ভূমিকা পালন করেন।

সেপ্টেম্বর মাসে কাজী নূরুজ্জামানকে ৭ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক নিযুক্ত করা হয়। এই সেক্টরের আওতায় ছিল গোটা রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলা এবং দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার অংশবিশেষ। উত্তরবঙ্গের অর্ধেকের বেশি এলাকা নিয়ে ছিল এই সেক্টর। এর অধীনে সাবসেক্টর ছিল নয়টি।

কাজী নূরুজ্জামান ৭ নম্বর সেক্টরের দায়িত্ব পাওয়ার পর শাহপুর গড়সহ আরও কয়েকটি যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। নভেম্বর মাসের শেষ দিকে শাহপুর গড়ের যুদ্ধে রণাঙ্গনে উপস্থিত থেকে তিনি নিজেই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি মুক্তিবাহিনীর একটি দল নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে অগ্রসর হন। ১৩ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জে যুদ্ধ হয়।

একটি যুদ্ধের বর্ণনা শোনা যাক কাজী নূরুজ্জামানের লেখা থেকে। তিনি লিখেছেন: ‘আমরা খঞ্জনপুর ও সাপাহার দখলের পরিকল্পনা করি। আক্রমণ করার আগে সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করা হয়। সিদ্ধান্ত হলো, আমাদের ১২০ জন মুক্তিযোদ্ধা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে খঞ্জনপুর ও সাপাহার আক্রমণ করবে। দুদিন পর অপারেশন শুরু হলো। রাতে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করলেন, ভোর রাত থেকে প্রচণ্ড গোলাগুলির আওয়াজ। সূর্য উঠতে উঠতে দেখি আঘাতপ্রাপ্ত ছেলেরা ফিরে আসছে। কিছুক্ষণ পর মুক্তিযোদ্ধাদের দলনায়ক ইদ্রিসকেও খুঁড়িয়ে আসতে দেখলাম।

‘জানতে পারলাম, মুক্তিযোদ্ধাদের যাওয়ার পথে ছিল অসংখ্য অ্যান্টিপারসোনাল মাইন। মুক্তিযোদ্ধারা মাইনে বাধাপ্রাপ্ত হন। এ সময় পাকিস্তানিরা প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে মুক্তিযোদ্ধারা আর অগ্রসর হতে পারেননি।

‘ইদ্রিস বলে, অগ্রসর হওয়ার সময় একটি মাইনে তার পায়ের চাপ লাগে। কিন্তু মাইন পুরোপুরি ফাটেনি। তাকে কেবল কয়েক গজ ছিটকে দিয়েছে। অ্যান্টিমাইনে মুক্তিযোদ্ধারা এত বেশি আহত হয়েছিলেন যে আমাদের ফার্স্ট এইডের ওষুধ ও ব্যান্ডেজ যা ছিল তা শেষ হয়ে যায়। আমাদের এই অপারেশন সফল হয়নি। কারণ, শত্রুপক্ষ আমাদের পরিকল্পনা জেনে ফেলেছিল।’

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান