বিজ্ঞাপন
default-image

জুলাইয়ের মাঝামাঝি ২ নম্বর সেক্টরের একদল মুক্তিযোদ্ধা চাঁদপুরে গেরিলা অপারেশন চালাতে ভারত থেকে এসে অবস্থান নেন জেলার হাইমচর উপজেলায়। তাঁরা গোপন শিবির স্থাপন করেন গাজীপুর ইউনিয়নের বাজাপ্তী গ্রামে। তাঁরা বেশ কয়েকটি অপারেশন চালান। তত্পরতা বৃদ্ধি পেলে পাকিস্তানি সেনারা রাজাকারদের সহায়তায় তাঁদের গোপন শিবিরের সন্ধান পেয়ে যায়। ৩০ আগস্ট পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল চাঁদপুর থেকে বাজাপ্তী গ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। তাদের আসার খবর মুক্তিযোদ্ধারা আগেই পেয়ে যান। ফলে তাঁরা বেড়িবাঁধের পাশে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ শুরু করেন। অনেকক্ষণ যুদ্ধ চলার পর সেদিন পাকিস্তানি সেনারা চলে যায়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের গোপন শিবির স্থানান্তর করেন রাঘবপুরের মজুমদারবাড়িতে।

১৮ বা ১৯ সেপ্টেম্বর সহযোগী রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে একদল পাকিস্তানি সেনা সেখানে আকস্মিকভাবে হানা দেয়। সেদিন শিবিরে এলাহী বক্স পাটোয়ারীসহ মাত্র তিনজন মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছিলেন। আকস্মিক আক্রমণে বিপর্যস্ত তিন মুক্তিযোদ্ধা মনোবল না হারিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেন। এভাবে তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের ঠেকিয়ে রাখেন। যুদ্ধে দুই সহযোদ্ধা শহীদ এবং এলাহী বক্স পাটোয়ারী আহত হন। গুলিতে তাঁর ডান হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর তিনি কোনো রকমে সেখান থেকে পালিয়ে নিজের বাড়িতে (বাজাপ্তী গ্রামে) চলে যান। সেখানে চিকিত্সাধীন ছিলেন তিনি।

২১ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে একদল পাকিস্তানি সেনা গানবোটযোগে বাজাপ্তীতে এসে তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে তাঁকে আটক করে নদীর তীরে নিয়ে হত্যা করে। ব্রাশফায়ারে ঝাঁঝরা এলাহী বক্স পাটোয়ারীর নিষ্প্রাণ মরদেহ কয়েক ঘণ্টা পড়ে থাকে নদীর তীরে। পরদিন পরিবারের সদস্যরা তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করেন।

এলাহী বক্স পাটোয়ারী আনসার বাহিনীতে চাকরি করতেন। প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। চাঁদপুরের পতন হলে ভারতে চলে যান। সেখানে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জুলাইয়ে দেশের ভেতরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর গেরিলা আক্রমণ চালানোর জন্য ২ নম্বর সেক্টর থেকে মুক্তিবাহিনীর স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গণযোদ্ধাদের চাঁদপুরে পাঠানো হয়। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন এলাহী বক্স পাটোয়ারীসহ নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর কয়েকজন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান