বিজ্ঞাপন
default-image

সকালে শুরু হলো যুদ্ধের প্রস্তুতি। অস্ত্র, গোলাবারুদ সবই পরীক্ষা করে নেওয়া হলো। এরপর সবাই ঘুমোতে গেলেন। কারণ, সারা রাত জেগে কাটাতে হবে। রাত ৯-১০টার মধ্যে সবাই উঠে পড়লেন। আক্রমণের জন্য যাত্রার নির্ধারিত সময় রাত ১১টা। এফইউপিতে (ফর্মি আপ প্লেস) পৌঁছার সময় রাত সাড়ে চারটা। আক্রমণের সময় ভোর সাড়ে পাঁচটা।

শীতের অন্ধকার রাত। চারদিক নিস্তব্ধ। এ টি এম হামিদুল হোসেনসহ মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সেনারা অ্যাসেম্বলি এরিয়ায় সমবেত হলেন নির্ধারিত সময়েই। তখন রাত আনুমানিক তিনটা। সেখানে কিছুক্ষণ যাত্রাবিরতি দিয়ে রওনা হলেন এফইউপির উদ্দেশে। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী মিলে প্রায় ৭০০ জন। কারও মুখে কোনো কথা নেই। শুধু ইশারায় কাজ হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সেনারা এফইউপিতে অবস্থান নিলেন। তারপর সময় গড়াতে থাকল।

এইচ আওয়ার (আক্রমণের সময়) আর মাত্র তিন মিনিট। এ টি এম হামিদুল হোসেন সহযোদ্ধাদের নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। হাতে অস্ত্র, ট্রিগার হাতে সবেমাত্র পা বাড়িয়েছেন, এ সময় নিস্তব্ধতা ভেদ করে বিকট শব্দ। আক্রমণের তখনো আড়াই মিনিট বাকি। মিত্রবাহিনীর একজন সেনার হাত থেকে উত্তেজনায় পিন খোলা গ্রেনেড মাটিতে পড়ে এই বিপত্তি। পাকিস্তানি সেনারা বুঝে গেল তাদের ওপর আক্রমণ আসন্ন। সঙ্গে সঙ্গে তারা আক্রমণ শুরু করল।

এ সময় মিত্রবাহিনীর পক্ষ থেকে শুরু হলো গোলাবর্ষণ। প্রথম লেয়ার শেষ হওয়ামাত্র মুক্তিযোদ্ধারা এ টি এম হামিদুল হোসেনের নেতৃত্বে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে গুলি করতে করতে ধাবিত হলেন পাকিস্তানি অবস্থানের দিকে।

শুরু হলো ডগফাইট। একটু পর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাংকারগুলোতে গ্রেনেড চার্জ করতে শুরু করলেন। কয়েকটি বাংকার ধ্বংস হয়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই গোটা পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে এল। এ ঘটনা ঘটে ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বরে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়িতে। সেদিন সূর্য ওঠার আগেই ফুলবাড়ির অপারেশন শেষ হয়। এ যুদ্ধে আটজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

এ টি এম হামিদুল হোসেন ১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করেন ৭ নম্বর সেক্টরের তপন সাবসেক্টরে। বেশ কয়েকটি যুদ্ধে তিনি সাহস, বীরত্ব ও রণকৌশল প্রদর্শন করেন।

এ টি এম হামিদুল হোসেন ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে কমিশন লাভ করেন। ১৯৮৯ সালে তাঁকে অকালীন অবসর দেওয়া হয়। তখন তাঁর পদবি ছিল মেজর।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান