বিজ্ঞাপন
default-image

এ এস এম এ খালেক ১৯৭১ সালে বৈমানিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসে (পিআইএ)। ২৫ মার্চ করাচি থেকে বিমান চালিয়ে ঢাকায় আসেন। ঢাকা বিমানবন্দরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড দেখে তাঁর মনে সন্দেহ দানা বাঁঁধে। তিনি তাঁর সন্দেহের কথা সবাইকে বলেন এবং সতর্ক করে দেন। সে রাতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।

কয়েক দিন পর ঢাকা থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে যোগ দেন প্রতিরোধযোদ্ধাদের সঙ্গে। আগরতলায় থাকাকালে তাঁর দেখা হয় আরও কয়েকজন বৈমানিকের সঙ্গে। তাঁরা আলোচনা করতে থাকেন, কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া যায়। সেখানে তাঁরা নানা ধরনের সাংগঠনিক কাজ করতে থাকেন।

একজন বৈমানিক হিসেবে তাঁর জন্য উপযুক্ত হচ্ছে বিমানের সাহায্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আঘাত করা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সে ব্যবস্থা হয়নি। সেপ্টেম্বরে মুক্তিবাহিনীর নিজস্ব বিমান উইং গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে এ এস এম এ খালেককে তাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ভারত সরকার মুক্তিবাহিনীকে তিনটি বিমান দেয়। এর একটি ছিল ডিসি-৩ বা ডাকোটা। এই বিমানের জন্য নির্বাচিত হন এ এস এম এ খালেক, আবদুস সাত্তার (বীর প্রতীক) এবং আবদুল মুকিত (বীর প্রতীক)।

কিলোফ্লাইট নামের অন্তরালে মুক্তিবাহিনীর বিমান উইংয়ের জন্মলগ্নে যে নয়জন বৈমানিক অন্তর্ভুক্ত হন, তাঁদের ছয়জনই ছিলেন বেসামরিক বৈমানিক। বিমান চালনার অভিজ্ঞতা থাকলেও তাঁদের সামরিক বিমানের সাহায্যে যুদ্ধ করার বা বিমান থেকে বোমা ফেলার কায়দাকানুন জানা ছিল না। সে জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণ নিতে হয়।

স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণে এ এস এম এ খালেক রপ্ত করেন বিমান নিয়ে যুদ্ধ করার কৌশল। বিশেষত, রাতে আধুনিক দিগ্দর্শন যন্ত্র ছাড়াই বিমান চালনা এবং শত্রুর রাডার ফাঁকি দিয়ে মাত্র ২০০ ফুট উচ্চতায় ওড়ার কৌশল। আধুনিক কোনো ধরনের দিকনির্দেশনা যন্ত্র ছাড়া রাতের আঁধারে শুধু কম্পাসের সাহায্যে বিমান চালনার পারদর্শিতা অর্জন একজন বৈমানিকের জন্য বিরাট সাফল্য। তিনি তা সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেন।

প্রশিক্ষণ শেষে এ এস এম এ খালেক অপেক্ষা করতে থাকেন অভিযানে যাওয়ার। সিদ্ধান্ত হয়, ডাকোটা বিমান নিয়ে এ এস এম এ খালেকরা ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে আক্রমণ চালাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে অভিযান তাঁরা করতে পারেননি। পরে ওই বিমান ব্যবহৃত হয় দুর্গম ঘাঁটিতে চলাচলে বা সরঞ্জামাদি পরিবহনে। দক্ষতার সঙ্গে তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান