বিজ্ঞাপন
default-image

কয়েক দিন ধরে সেনানিবাসের ভেতরটা থমথমে। অবাঙালি সেনাসদস্যরা বাঙালিদের কেন জানি এড়িয়ে চলছে। সেনানিবাসে বাঙালিও তেমন নেই। বেশির ভাগ অবাঙালি। বাঙালি বলতে আছেন আলী আকবর আকনসহ আনুমানিক ১৬০ জন। কর্মকর্তা বলতে ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন (বীর প্রতীক, পরে মেজর জেনারেল), সুবেদার মেজর হারিছ মিয়া (বীর প্রতীক) ও তিনি।

সেনানিবাসের বাইরে কী ঘটছে, সেটা আলী আকবর আকন ও তাঁর সহযোদ্ধারা তেমন জানেন না। ২৮ মার্চ আলী আকবর আকন ও তাঁর সহযোদ্ধারা জানতে পারলেন দেশের কিছু ঘটনা। এরপর ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তাঁরা কয়েকজন আলোচনা করলেন। সবাই বিদ্রোহ করে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে একমত হলেন। কিন্তু সেই সুযোগ তাঁরা পেলেন না।

৩১ মার্চ রাতে আলী আকবর আকনদের অতর্কিতে আক্রমণ করল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৬ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ও ২৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট গোলন্দাজ বাহিনী। আলী আকবর আকন ও তাঁর সহযোদ্ধারা সতর্কই ছিলেন। তাঁরাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করলেন। দুই পক্ষে গুলি-পাল্টা গুলি চলতে থাকল। পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে আলী আকবর আকনদেরই বেশি ক্ষয়ক্ষতি হলো। কয়েকজন শহীদ ও আহত হলেন।

সকালবেলা গোলাগুলির মাত্রা কমে গেল। তিনি ধারণা করলেন, পাকিস্তানি সেনারা আবার সন্ধ্যায় প্রচণ্ড আক্রমণ চালাবে। সেই আক্রমণে তাঁদের টিকে থাকতে হবে। তিনি সহযোদ্ধাদের গোলাবারুদ সংগ্রহ করতে বললেন। বেলা আনুমানিক পাঁচটা কি সাড়ে পাঁচটা। আলী আকবর দুরবিন দিয়ে আড়াল থেকে দেখতে থাকলেন পাকিস্তানি সেনাদের তত্পরতা। ঠিক তখনই পাকিস্তানি অবস্থান থেকে ছুটে এল একঝাঁক গুলি। একটি গুলি বিদ্ধ হলো তাঁর বুকে। তাঁর হাত থেকে ছিটকে পড়ে গেল স্টেনগান ও দুরবিন।

তীব্র যন্ত্রণায় আলী আকবর আকনের মুখটা নীল হয়ে গেল। তবে দমে গেলেন না। সাহসও হারালেন না। সেখানে তাঁর কোনো সহযোদ্ধা নেই। তাঁরা জানেনও না তিনি আহত। অনেক কষ্টে সেখান থেকে ফিরে গেলেন সহযোদ্ধাদের কাছে।

আলী আকবর আকন চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। তখন তাঁর পদবি ছিল নায়েব সুবেদার। সৈয়দপুর সেনানিবাস থেকে তাঁরা পালিয়ে গিয়ে সমবেত হন বদরগঞ্জে। সেখানে প্রাথমিক চিকিত্সা দিয়ে তাঁকে পাঠানো হয় ভারতে। চিকিত্সা নিয়ে আবার যোগ দেন যুদ্ধে। কিন্তু প্রত্যক্ষযুদ্ধে তিনি আর অংশ নিতে পারেননি। পরে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোয়ার্টার মাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান