বিজ্ঞাপন
default-image

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান। আবুল বাশার একজন সহযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে একটি বাংকারে সতর্ক অবস্থায় আছেন। সকাল থেকেই শুরু হলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ। গোলা এসে পড়তে লাগল তাঁদের অবস্থানের চারপাশে। ঘণ্টা দুই পর তাঁরা দেখতে পেলেন দূরে একদল পাকিস্তানি সেনা। তারা তাঁদের প্রতিরক্ষা অবস্থানের দিকে ক্ষিপ্রগতিতে এগিয়ে আসছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে একটি মেশিনগান, তিন-চারটি এলএমজি। বাকিগুলো সাধারণ অস্ত্র। অগ্রসরমাণ পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের আওতায় আসামাত্র গর্জে উঠল তাঁদের অস্ত্র। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাদের ভারী অস্ত্রের দাপটে মুক্তিযোদ্ধারা কোণঠাসা হয়ে পড়লেন। একপর্যায়ে শুরু হলো বিমান হামলা। পাকিস্তানি বিমান আকাশ থেকে গুলিবর্ষণ শুরু করল। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা অনেকে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হলেন।

আবুল বাশারসহ কয়েকজন মনোবল হারালেন না। তিনি সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করে চললেন। কিন্তু বেশিক্ষণ পারলেন না। বিমান থেকে ছোড়া কয়েকটি গুলি এসে লাগল তাঁর মাথায়। শহীদ হলেন তিনি। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ৯ মে তারিখের। ঘটেছিল বিবির বাজারে।

বিবির বাজার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার অন্তর্গত। কুমিল্লা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। প্রতিরোধযুদ্ধের পর কুমিল্লা অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা সমবেত হন বিবির বাজারে। কুমিল্লা শহরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের বিবির বাজারের অবস্থানে আক্রমণ করতে থাকে। কয়েকবার সেখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। প্রতিবারই মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিহত করতে সক্ষম হন। বিবির বাজারের প্রতিরক্ষা অবস্থানে বেশির ভাগই ছিলেন ইপিআর সদস্য। সেদিনের যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর আবুল বাশারসহ কয়েকজন শহীদ ও ১০-১২ জন আহত হন। পাকিস্তানি সেনাদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরে সহযোদ্ধারা আবুল বাশারের লাশ উদ্ধার করে বিবির বাজারেই সমাহিত করেন।

আবুল বাশার চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন কুমিল্লা উইংয়ে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান