বিজ্ঞাপন
default-image

আবুল কালাম আজাদ কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে মা-বাবার যোগাযোগ ছিল না। স্বাধীনতার পর মা-বাবা অপেক্ষায় থাকেন ছেলের। কিন্তু ছেলে আর ফিরে আসে না। দরিদ্র মা-বাবার পক্ষে সম্ভব হয়নি সৈয়দপুর সেনানিবাসে গিয়ে ছেলের খোঁজ নেওয়া। কয়েক মাস পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে জানানো হয়, তাঁদের ছেলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এক যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। কোন দিন এবং কোথায় যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, সে তথ্য হয়তো চিঠিতে ছিল। কিন্তু সেই চিঠি হারিয়ে গেছে।

১৯৭১ সালের মার্চের প্রথম দিকে সম্ভাব্য ভারতীয় আগ্রাসন, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, অনির্ধারিত সাঁতার প্রশিক্ষণ ইত্যাদির অজুহাতে এই রেজিমেন্টের সেনাদের সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন করা হয়। বি ও ডি কোম্পানিকে পাঠানো হয় রংপুরের ঘোড়াঘাটে। সি কোম্পানিকে সৈয়দপুর-দিনাজপুর সড়কের মধ্যবর্তী মণ্ডলপাড়ায় মোতায়েন করা হয় বৈদ্যুতিক কেন্দ্রের পাহারায়। এ (আলফা) কোম্পানিকে পাঠানো হয় দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। ওয়্যারলেস সেট ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র থাকে ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারের নিয়ন্ত্রণে। এ সময় সেনানিবাসে অবস্থান করছিল রেজিমেন্টের রিয়ার পার্টি, ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার ও হেডকোয়ার্টার কোম্পানির কিছু সেনা।

২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত ঢাকার গণহত্যার সংবাদ দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থানরত তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যদের কাছে পৌঁছানোর পরপরই এই রেজিমেন্টের কোম্পানিগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিদ্রোহ করে। ৩০ মার্চ রাতে সেনানিবাসে অবস্থানরত বাঙালি সেনাদের ওপর পাকিস্তানি সেনারা আক্রমণ করে। তখন বাঙালি সেনারা তাদের প্রতিরোধ করেন। এ যুদ্ধে অনেক বাঙালি সেনা শহীদ ও আহত হন। অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তাঁরা পরে সমবেত হন দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে। তাঁরা দিনাজপুরের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এর মধ্যে ভূষিরবন্দর (৫ ও ৬ এপ্রিল), পার্বতীপুর (৭ এপ্রিল), বদরগঞ্জ (৮ ও ৯ এপ্রিল), খোলাহাটি (১০ এপ্রিল), ফুলবাড়ী (১১ এপ্রিল) এবং হিলির যুদ্ধ (১৯-২০ এপ্রিল) উল্লেখযোগ্য। ২১ এপ্রিলের পর মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে অবস্থান নেন। এরপর জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত এলাকার রামগতি, ফুলবাড়ী, চরখাই, রামনগর, জলপাইতলী, রাজাই, আমবাড়ী, গৌরীপুর, মন্মথপুরসহ কয়েকটি জায়গায় অ্যামবুশ, রেইড ও কমান্ডো হামলা চালান। কোনো এক যুদ্ধে আবুল কালাম আজাদ শহীদ হন। এ সময় ৭০০ জন সদস্যের তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৪১৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ক্যাম্পে দেখা যায়। অন্যরা শহীদ, আহত অথবা নিখোঁজ হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান