বিজ্ঞাপন
default-image

অন্ধকারে পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান লক্ষ্য করে আবদুস সোবহান ও তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধা নিক্ষেপ করলেন বেশ কটি হ্যান্ড গ্রেনেড। অন্য সহযোদ্ধারা বর্ষণ করে চললেন একযোগে গুলি। হ্যান্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দে হকচকিত শত্রুপক্ষ। তারপর তাদের দিক থেকেও এল বৃষ্টির মতো পাল্টা গুলি।

পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে আবদুস সোবহান ও অন্য মুক্তিযোদ্ধারা বেশ বেকায়দায় পড়েন। স্থানীয় সোর্সের ভুলের কারণে তাঁরা ঢুকে পড়েন একেবারে পাকিস্তানি সেনাদের হাতের নাগালে। পাল্টা গুলিতে তাঁদের অনেকে হতাহত হন। ব্রাশফায়ারের একঝাঁক গুলি এসে লাগে আবদুস সোবহানের পেট, ঊরু ও হাতের আঙুলে। হাতের একটি আঙুল ও বাঁ পায়ের ঊরুর মাংসপেশি উড়ে যায়।

গুরুতর আহত হলেন আবদুস সোবহান। সহযোদ্ধা আরও অনেকে আহত হলেন। রক্তে ভেসে যেতে থাকল জায়গাটা। দেখলেন, গুলিবিদ্ধ তিন সহযোদ্ধা ছটফট করতে করতে শহীদ হলেন। তখনো তিনি জ্ঞান হারাননি। ভাবলেন, তাঁর জীবন বুঝি এখানেই শেষ। তিনি যেখানে ছিলেন, সেখানে ছিল হাঁটু পানি। তিনি ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ছেন, এমন সময় এক সহযোদ্ধা তাঁর কাছে ছুটে এলেন। তিনি তাঁকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে টেনে দূরে নিয়ে গেলেন। সেখান থেকে উদ্ধারকর্মীর দল তাঁকে ধরাধরি করে নিয়ে রওনা হলো সীমান্তের দিকে। এ সময় তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। এর পরের ঘটনা তো আরেক কাহিনি।

ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ৩০ অক্টোবরের মধ্যরাতে। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কমলগঞ্জ সীমান্তের ধলই বিওপিতে। এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দুর্ভেদ্য একটি ঘাঁটি। ধলই বিওপির চারপাশে ছোট ছোট টিলা। চা-বাগান। মাঝেমধ্যে ঘন বাঁশবন। নালা-খানাখন্দ। বিওপি-সংলগ্ন চারদিক কাঁটাতারে ঘেরা। ভূমিতে পুঁতে রাখা হয়েছে মাইন। শত্রুর অবস্থান বিভিন্ন স্থানের গোপন বাংকারে। এসব বাংকার এতই মজবুত ছিল যে সেগুলো মাঝারি পাল্লার কামানের গোলার আঘাতে ধ্বংস করা সম্ভব ছিল না।

এ ঘটনার দিন কয়েক আগে, অর্থাৎ ২৮ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় দল সেখানে আক্রমণ করেছিল। সেই আক্রমণ সাফল্যের মুখ দেখেনি। সেদিন তাঁদের বেশ কয়েকজন সহযোদ্ধা শহীদ ও আহত হন। ধলই বিওপিতে কয়েক দিন ধরে যুদ্ধ চলে এবং শেষ পর্যন্ত ৩ নভেম্বর মুক্ত হয় এই এলাকা।

আবদুস সোবহান ১৯৭১ সালে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। তাঁদের অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাঁরা আক্রান্ত হন। তখন সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে তাঁরা চৌগাছায় সমবেত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি ধলই বিওপি ছাড়াও কয়েকটি স্থানে যুদ্ধ করেছেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান