বিজ্ঞাপন
default-image

আবদুস সালাম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নবীন সৈনিক ছিলেন। চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৯৭০ সালের শেষে যোগ দেন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। কয়েক মাস পর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তখন তিনি যুদ্ধে যোগ দেন।

প্রতিরোধযুদ্ধ চলাকালে আবদুস সালাম প্রথমে যুদ্ধ করেন চট্টগ্রাম জেলার কালুরঘাটে। এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় ১১ এপ্রিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে কালুরঘাটের পতন হলে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে অবস্থান নেন পটিয়ায়। এরপর সবাই বান্দরবান হয়ে রাঙামাটি যান। পরে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেন মহালছড়িতে।

এই মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী (বীর উত্তম, পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল)। তিনি মহালছড়িতে হেডকোয়ার্টার্স স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধাদের চারটি দলে ভাগ করেন। প্রথম দল অবস্থান নেয় ঘাগড়াতে। দ্বিতীয় দল বুড়িঘাটে, তৃতীয় দল রাঙামাটি বরকলের মধ্যবর্তী স্থানে এবং চতুর্থ দল কুতুবছড়ি এলাকায়।

আবদুস সালাম ছিলেন চতুর্থ দলে। এর দলনেতা ছিলেন সুবেদার মুত্তালিব। ১৮ এপ্রিল তাঁরা কুতুবছড়িতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে অ্যামবুশ করেন। এই অ্যামবুশে তাঁদের হাতে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়।

২৭ এপ্রিল মহালছড়ির পতন হলে মীর শওকত আলীর নেতৃত্বাধীন বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা সমবেত হন রামগড়ে। এ সময় আবদুস সালামের দল হেঁয়াকোতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। রামগড় রক্ষায় হেঁয়াকো ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

২৯ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হেঁয়াকোতে মুক্তিবাহিনীর ওপর আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিরোধ করতে থাকেন। যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। ৩০ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে বেপরোয়া আক্রমণ চালায়। সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রচণ্ড লড়াই হয়। মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণপণ লড়াই করেও ব্যর্থ হন। সেদিন বিকেলেই হেঁয়াকোর নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানি সেনাদের হাতে চলে যায়।

এরপর আবদুস সালামসহ মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে চলে যান। সেখানে পুনর্গঠিত হওয়ার পর জুলাই মাস থেকে তাঁরা যুদ্ধ করেন ৫ নম্বর সেক্টরে। এই সেক্টরে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পর আবদুস সালাম এক যুদ্ধে শহীদ হন। কোন যুদ্ধে বা কত তারিখে তিনি শহীদ হয়েছেন, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান