বিজ্ঞাপন
default-image

আবদুস সামাদ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জুন মাসে ২ নম্বর সেক্টর থেকে ঢাকায় আসা ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দেন। কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে অংশ নেন। একটি অপারেশনে তিনি আহত হন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধারা দুঃসাহসী কয়েকটি অপারেশন চালান। এর মধ্যে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (পরে শেরাটন, এখন রূপসী বাংলা) এবং ফার্মগেটে চালানো অপারেশনগুলো অন্যতম। তাঁরা দুবার ইন্টারকন্টিনেন্টালে অপারেশন চালান। প্রথমে জুনে, দ্বিতীয়বার ১১ আগস্ট। দ্বিতীয় অপারেশনের মূল নায়ক ছিলেন আবদুস সামাদ ও আবু বকর (পরে শহীদ ও মরণোত্তর বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত)।

এই অপারেশন করার জন্য আবদুস সামাদ ও আবু বকর সুযোগ খুঁজছিলেন। থাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের একটা অফিস ছিল হোটেলের শপিং আর্কেডে। শপিং আর্কেডের কয়েকটি দোকানের নিয়নসাইন সামাদেরই করা। এ সূত্রে সামাদ খবর পান, ব্যবসায়িক মন্দার কারণে ওই অফিস হোটেলেরই ছোট এক কক্ষে স্থানান্তরিত হবে।

অন্য কেউ যাতে স্থানান্তরের কাজটা না নিতে না পারে, সে জন্য তিনি খুব কম দরে কাজটা নেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে হোটেলে কয়েক দিন রেকি করেন। ১১ আগস্ট তাঁর কাজ শেষ হওয়ার কথা। ওই দিন সকালে তাঁদের এক সহযোদ্ধা বায়তুল মোকাররম মার্কেট থেকে একটি ব্রিফকেস কিনে আনেন। এর ভেতরে তাঁরা সাজিয়ে রাখেন ২৮ পাউন্ড পিকে ও ৫৫ মিনিট মেয়াদি টাইম বোমা। তারপর বিকেলে গাড়িতে চেপে রওনা হন আবদুস সামাদ, আবু বকর, মায়া (মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, বীর বিক্রম) ও গাজী (গোলাম দস্তগীর গাজী, বীর প্রতীক)। হোটেলের গাড়ি পার্কিংয়ে পৌঁছে আবদুস সামাদ ও বকর হোটেলের ভেতরে ঢোকেন। বাকি দুজন গাড়িতে স্টেনগান নিয়ে বসে থাকেন।

আবদুস সামাদ ও আবু বকর হোটেল লাউঞ্জে মূল দরজা দিয়ে না ঢুকে ‘সুইস এয়ারের’ অফিস কক্ষের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢোকেন। এ ব্যাপারে সহায়তা করেন ওই অফিসেরই একজন বাঙালি কর্মী। ব্রিফকেসসহ দু্জন সরাসরি প্রসাধনকক্ষে যান। আবদুস সামাদ বাইরে থাকেন কাভার হিসেবে। আর বকর একেবারে কোনার কক্ষে ঢুকে দরজা আটকে টাইম বোমা চালু করে ব্রিফকেস রাখেন কমোডের পেছনে। তারপর দরজা ছিটকিনি লাগিয়ে রেখেই দেয়াল টপকে বেরিয়ে আসেন। এরপর দুজন সোজা চলে যান অপেক্ষমাণ গাড়ির কাছে। গাড়িতে ওঠামাত্র দ্রুত সেটি বেরিয়ে যায়।

ঠিক ৫৫ মিনিট পরই ঘটে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। দুই দিন পর বিশ্বের সংবাদপত্রে রোমাঞ্চকর এই অপারেশনের খবর প্রকাশিত হয় বেশ গুরুত্ব সহকারে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান