বিজ্ঞাপন
default-image

ভোররাতে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল একযোগে আক্রমণ করল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে। একটি দলে আছেন আবদুল হামিদ খান। পাকিস্তানি সেনারাও বসে থাকল না। পাল্টা আক্রমণ চালাতে থাকল। সারা দিন যুদ্ধ চলল। আবদুল হামিদ খানসহ বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকলেন। যুদ্ধ চলতে থাকল। তিন দিন একটানা যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে গেল। এ ঘটনা ঘটে হাতীবান্ধায় ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষে। হাতীবান্ধা লালমনিরহাট জেলার অন্তর্গত।

২৭ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানে আক্রমণ চালান। তখন পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ চালায়। সারা দিন যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের বিভ্রান্ত করার জন্য বিকেলে গোলাগুলি বন্ধ করে দেন। এরপর পাকিস্তানি সেনারাও গোলাগুলি বন্ধ করে। সন্ধ্যার পর মুক্তিযোদ্ধারা আবার আকস্মিক আক্রমণ শুরু করেন। এতে পাকিস্তানি সেনা, ইপিসিএএফ ও রাজাকাররা দিশাহারা হয়ে পড়ে। সাতটার পর থেকে যুদ্ধের গতি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানের একদম কাছে চলে যান। তখন পাকিস্তানি আর্টিলারি ব্যাটারি মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রগামী দলের ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করে।

আবদুল হামিদ খান এ সময় সাহসী ভূমিকা পালন করেন। ব্যাপক গোলাবর্ষণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হন। তখন তিনি সাহসের সঙ্গে তাঁর দলের সহযোদ্ধাদের ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেন। তিন দিন যুদ্ধের পর হাতীবান্ধা মুক্ত হয়। হাতীবান্ধার যুদ্ধ ছিল খুবই ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ৩৫ থেকে ৩৬ জন শহীদ ও অনেকে আহত হন।

আবদুল হামিদ খান চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর সেক্টরের ১০ নম্বর উইংয়ের (বর্তমান ব্যাটালিয়ন) অধীন চিলমারীতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ৬ নম্বর সেক্টরের পাটগ্রাম ও মোগলহাট সাবসেক্টরে। মোগলহাট এলাকায় তিনি কয়েকবার অ্যামবুশ ও আকস্মিক আক্রমণ করেন। এতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। একবার পাটেশ্বরীতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে আকস্মিক আক্রমণ করে তিনজন পাকিস্তানি সেনাকে জীবন্ত বন্দী করে সীমান্তের ওপারে নিয়ে যান।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান