বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষে তিনটি বিমান নিয়ে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনীর বিমান উইং। বিমানযোদ্ধারা মাত্র এক মাসের প্রস্তুতিতেই যুদ্ধযাত্রার জন্য তৈরি হন।

মুক্তিবাহিনীর তিনটি বিমানের একটি ছিল ডিসি-৩ বা ডাকোটা বিমান, দ্বিতীয়টি অটার বিমান, তৃতীয়টি অ্যালুয়েট-৩ হেলিকপ্টার। প্রতিটির জন্য তিনজন করে মনোনীত হন। আবদুল মুকিত, আবদুল খালেক ও আবদুস সাত্তারকে নির্বাচন করা হয় ডাকোটার জন্য।

সিদ্ধান্ত হয় যে আবদুল মুকিতরা ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে আক্রমণ চালাবেন। তারিখ নির্ধারিত হয় ২৮ নভেম্বর। পরে সেই তারিখ পিছিয়ে ৩ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়।

সবকিছু ঠিকঠাক। নভেম্বরের শেষে হঠাত্ তাঁদের অভিযান বাতিল করা হয়। ডাকোটা বিমানে অকটেন ১০০ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহূত হয়। এতে ইঞ্জিনের পেছন দিয়ে যে ধোঁয়া বের হয়, তাতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি করে। রাতের বেলায় অনেক দূর থেকে তা দৃষ্টিগোচর হয়। এ জন্য বিমানটি শত্রুর সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে, তাই সেটি দিয়ে সামরিক অভিযান বাতিল করা হয়।

প্রশিক্ষণ নিয়ে আবদুল মুকিত ও তাঁর দুই সহযোদ্ধা অধীর অপেক্ষায় ছিলেন অভিযানে যাওয়ার জন্য। ঢাকায় দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনার জন্য আবদুল মুকিত উদ্গ্রীব ছিলেন। প্রায় ‘নিশ্চিত মৃত্যুর’ এই অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে তিনি ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ অভিযান তিনি পরিচালনা করতে পারেননি।

পরে ডাকোটা মুক্তিবাহিনীর পরিবহন বিমান হিসেবে ব্যবহূত হয়। দুর্গম ঘাঁটিতে চলাচল ও অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহের কাজে সেটি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া মুক্তিবাহিনীর প্রধান কর্নেল এম এ জি ওসমানী (পরে জেনারেল) ও উপপ্রধান এ কে খন্দকার (বীর উত্তম, এয়ার ভাইস মার্শাল, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান, বর্তমানে মন্ত্রী) ওই বিমানে আলাদাভাবে কয়েকবার বিভিন্ন রণাঙ্গন পরিদর্শন করেন। তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনা করেন।

আবদুল মুকিত ১৯৭১ সালে পিআইএতে (পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস) কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৫ সালে তিনি পাকিস্তানি বিমানবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। প্রশিক্ষণ চলাকালে অবতরণের সময় একবার তাঁর বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে তিনি আহত হন। সুস্থ হয়ে অবশিষ্ট প্রশিক্ষণ সফলতার সঙ্গে শেষ করেন। কিন্তু তাঁকে যুদ্ধবিমান চালনার দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়। তখন তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। পরে পিআইএতে যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি চট্টগ্রামে সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। জুন মাসের মাঝামাঝি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় যান। সেখানে মুক্তিযুদ্ধসংশ্লিষ্ট নানা ধরনের সাংগঠনিক কাজে সম্পৃক্ত হন। পরে তিনি বিমান উইংয়ে যোগ দেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান