বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিযোদ্ধাদের তত্পরতা ও চলাচল সীমিত রাখার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও রাতে মুজিবনগর এলাকায় আসত। তারা সারা রাত গোপনে কোনো স্থানে অবস্থান করত। কোনো কোনো দিন টহলও দিত।

আবদুল মালিক (আবদুল মালেক) ও তাঁর সহযোদ্ধারা প্রায়ই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হতেন। তখন তাঁরা পাকিস্তানিদের আক্রমণ করতেন। আবার কোনো দিন তাঁরা ফাঁদ পাততেন। পাকিস্তানিদের বাগে পেলে অতর্কিতে আক্রমণ চালাতেন। এভাবে তাঁরা কয়েকবার গেরিলা অপারেশন করেন। এর মাধ্যমে তাঁরা পাকিস্তানিদের বেশ ক্ষয়ক্ষতি করেন।

২৫ নভেম্বর দুই পক্ষে তুমুল সম্মুখযুদ্ধ হয়। গোলাগুলিতে শান্ত এলাকা নিমেষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দলটি সেনা আর রাজাকার সমন্বয়ে মিশ্রিত দল ছিল। বেশ বড়। আবদুল মালিকসহ মুক্তিযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। সীমান্ত থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী গোলাবর্ষণের মাধ্যমে তাঁদের সহযোগিতা করে।

প্রায় তিন ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধ হয়। এরপর পাকিস্তানিরা পিছু হটে যায়। তবে দূর থেকে দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি গুলি অব্যাহত থাকে। আকস্মিক এ যুদ্ধে পাকিস্তানিদের দু-তিনজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। তিনজন সেনা ও আটজন রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধারা আটক করতে সক্ষম হন। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ভারতীয় সেনা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন।

সম্মুখযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আবদুল মালিকসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আটক পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের সীমান্তের ওপারে নিয়ে যান। দূরে অবস্থানরত পাকিস্তানিরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি করে। তখন আবদুল মালিক গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। তাঁর পেটে গুলি লাগে।

মেহেরপুর জেলার অন্তর্গত মুজিবনগর (১৯৭১ সালের আগে বৈদ্যনাথতলা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর নামকরণ করা হয়)। এর অবস্থান জেলা সদরের দক্ষিণে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন।

আবদুল মালিক চাকরি করতেন ইপিআরের সিগন্যালসে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন ঢাকার পিলখানা সদর দপ্তরে। ২৫ মার্চ রাতে আক্রান্ত হওয়ার পর আরও সাতজনের সঙ্গে কৌশলে পালাতে সক্ষম হন। এরপর যশোর হয়ে ভারতে যান। তাঁকে মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আবদুল মালিক পরে ৮ নম্বর সেক্টরের লালবাজার সাবসেক্টরে যুদ্ধ করেন। অনেক যুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। এর মধ্যে রতনপুর, বাগোয়ান বাগান, শিমুলতলার যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য।

২০ জুলাই তিনি সহযোদ্ধাদের সঙ্গে মুজিবনগরে টহলরত ছিলেন। দুপুরে তাঁরা খবর পান, মুজিবনগরের কাছে বাগোয়ান বাগানে পাকিস্তানি সেনার একটি দল ঘোরাঘুরি করছে। তাঁরা দ্রুত সেখানে গিয়ে পাকিস্তানিদের আক্রমণ করেন। প্রায় এক ঘণ্টা যুদ্ধ হয়। দুজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ক্ষতি হয়নি।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান