বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আবদুল মজিদ যুদ্ধে যোগ দেন। তিনি ছিলেন ইপিআরে। আবদুল মজিদ ১৯৯১ সালের আগ পর্যন্ত জানতেন না তিনি বীর বিক্রম। সে বছর তাঁর গ্রামের ঠিকানায় একটি ঈদকার্ড আসে। খামে লেখা ‘আবদুল মজিদ বীর বিক্রম’। তিনি প্রথমে এর অর্থ বুঝতে পারেননি। ১৯৯৮ সালে বীর বিক্রম পদক ও সনদ তিনি হাতে পান।

আবদুল মজিদ ৬ নম্বর সেক্টরের অধীন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম-হাতীবান্ধা এলাকায় যুদ্ধ করেন। জুলাইয়ের মাঝামাঝি একদিন তাঁরা যান হাতীবান্ধার পূর্বের পারুলিয়া রেলসেতু ধ্বংস করতে। আবদুল মজিদ ছিলেন এই অভিযানে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রবর্তী দলের গ্রুপ কমান্ডার। সেতুর কাছে অবস্থান নেওয়ার কিছুক্ষণ পর দেখেন, লালমনিরহাটের দিক থেকে এগিয়ে আসছে অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা। গ্রুপ কমান্ডার ও গানার হিসেবে তিনি ব্রেনগান হাতে ছিলেন পুরোভাগে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন ইপিআর সদস্য। নিশানার মধ্যে পাকিস্তানি সেনারা আসামাত্র গর্জে উঠল আবদুল মজিদের ব্রেনগান। একই সময় তাঁর সঙ্গীরাও একযোগে গুলি করতে শুরু করলেন। গুলিতে লুটিয়ে পড়ল বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। তাদের দিক থেকেও শুরু হলো পাল্টা গুলিবর্ষণ। একটু পর তারা শুরু করে আর্টিলারি শেলিং। একপর্যায়ে আবদুল মজিদ দেখেন, তাঁর সঙ্গীরা কেউ তাঁর পাশে নেই।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে আবদুল মজিদের সহযোদ্ধারা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হন। এ সময় তিনি একা একস্থানে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ মোকাবিলা করছিলেন। সহযোদ্ধারা তাঁকে পশ্চাদপসরণের খবর দিতে পারেননি। ফলে তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে একা হয়ে যান। পরে অনেক কৌশলে তিনি পশ্চাদপসরণ করেন।

আবদুল মজিদ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু পারুলিয়ার যুদ্ধ তাঁর জীবনের স্মরণীয় ঘটনা।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান