বিজ্ঞাপন
default-image

সব বাধা উপেক্ষা করে আবদুল বাতেন খান ও তাঁর সহযোদ্ধারা আক্রমণ করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও প্রতিরোধ শুরু করে। গোলাগুলিতে রাতের আকাশ লাল হয়ে ওঠে। তুমুল যুদ্ধ চলতে থাকে। সকালে শত্রুসেনাদের ওপর তাঁরা বিপুল বিক্রমে চড়াও হন। তাঁদের বিক্রমে পাকিস্তানি সেনারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা পেছন দিকে সরে যায়। নতুন স্থানে তারা অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে বিরাট এলাকা।

পরে পাকিস্তানি সেনারা নতুন শক্তি সঞ্চয় করে পাল্টা আক্রমণ চালায়। আবদুল বাতেন খানসহ মুক্তিযোদ্ধারা এমন আক্রমণের জন্য প্রস্তুতই ছিলেন। সাহসের সঙ্গে তাঁরা পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণ মোকাবিলা করেন। পাকিস্তানিরা তাঁদের অবস্থানে ব্যাপক হারে গোলা ছোড়ে। বিস্ফোরিত গোলার ছোট-বড় স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধা। কিন্তু তাঁরা দখল করা জায়গা থেকে সরে যাননি।

এ ঘটনা সালদা নদীতে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন সালদা নদী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত। ১৯৭১ সালে সালদা এলাকায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক তত্পরতা। নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য পাকিস্তানিরা একপর্যায়ে সালদা রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে ঘাঁটি তৈরি করে।

মুক্তিযুদ্ধকালে সালদা এলাকায় অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েক দিন পরপর পাকিস্তানিদের আক্রমণ করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি তাঁরা বড় ধরনের আক্রমণ চালান। চূড়ান্ত আক্রমণের আগে পাকিস্তানিদের সব প্রতিরক্ষায় মুক্তিবাহিনীর মুজিব ব্যাটারির কামান দিয়ে অসংখ্য গোলা ছোড়া হয়। এর ফলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষার, বিশেষত কয়েকটি বাংকারের, ব্যাপক ক্ষতি হয়।

সালদা নদী রেলস্টেশনের বাংকারগুলো ছিল রেলের বগি দিয়ে তৈরি। ওপরের স্তর যুদ্ধের জন্য। মধ্যম স্তর গোলাবারুদ রাখাসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহারের জন্য। নিচের স্তর ছিল বিশ্রামের জন্য। মুক্তিবাহিনীর ছোড়া কামানের গোলায় দু-তিনটি বাংকার সম্পূর্ণ ধ্বংস ও কয়েকটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গোলার আঘাতে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও আহত হয়।

আবদুল বাতেন খান চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানিতে। রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে। তখন তাঁর পদবি ছিল ল্যান্স নায়েক। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি তাঁর ইউনিটের সঙ্গে শমশেরনগরে ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মেজর খালেদ মোশাররফের (বীর উত্তম, পরে মেজর জেনারেল) নেতৃত্বে তিনি তাতে যোগ দেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মৌলভীবাজার জেলার কয়েক স্থানে সাহসের সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। পরে দুই নম্বর সেক্টরের সালদা নদী সাবসেক্টরে যুদ্ধ করেন। ধনদইল গ্রাম, নয়নপুরসহ বিভিন্ন স্থানের যুদ্ধে অংশ নেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান