বিজ্ঞাপন
default-image

১৫ অক্টোবর ১৯৭১। ভারতে মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে সকাল থেকেই চাঞ্চল্য। বেলা ১২টা বাজার আগেই আবদুল জব্বারসহ মুক্তিযোদ্ধারা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলেন। তারপর একটু বিশ্রাম নিয়ে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। সংখ্যায় তাঁরা শতাধিক।

দিনের বেলায়ই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিযোদ্ধারা প্রবেশ করলেন বাংলাদেশের ভেতরে। চারদিকে চা-বাগান।

বিভিন্ন চা-বাগানে আছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থান। মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে সেসব চা-বাগানে অতর্কিতে আক্রমণ করবেন। এর মধ্যে ফুলতলা-সাগরনাল চা-বাগান অন্যতম। অবস্থানগত কারণে সাগরনালের গুরুত্ব অনেক। জুড়ী থেকে আট-নয় মাইল পর সাগরনাল। তারপর আবার কয়েক মাইল দূরত্ব অতিক্রম করে ফুলতলা।

চা-বাগানগুলো মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে। ফুলতলার পরই ভারতীয় সীমান্ত এলাকা। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ফুলতলা-সাগরনাল চা-বাগানে ঘাঁটি তৈরি করে। শক্তি-সামর্থ্যও সংহত করে যথেষ্ট পরিমাণে। নিরীহ চা-শ্রমিকেরা তখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতনে ঘরবাড়ি ছেড়ে পলাতক। কেউ কেউ অবশ্য পালাতে পারেননি। তাঁদের ওপর পাকিস্তানি সেনারা নির্যাতন চালাতে থাকে। অত্যাচারী পাকিস্তানি সেনাদের সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্যই ছিল ওই অপারেশন।

শেষ রাতে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে একযোগে আক্রমণ চালান। পরদিন বেলা ১১টা পর্যন্ত সেখানে যুদ্ধ চলে। সাগরনাল চা-বাগানের যুদ্ধে আবদুল জব্বার যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম হন। সেদিন যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে প্রায় ২৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। আহত হয় অনেক। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কয়েকজন আহত হন। এর বেশি ক্ষয়ক্ষতি মুক্তিযোদ্ধাদের হয়নি।

এই যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ আছে মেজর চিত্তরঞ্জন দত্তের (বীর উত্তম, পরে মেজর জেনারেল) ভাষ্যে। সেখানে তিনি বলেন, ‘প্রথম বেঙ্গল রেজিমেন্ট মেজর জিয়াউদ্দীন আহমদের (বীর উত্তম) নেতৃত্বে এবং অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্ট মেজর আমিনের (আমিনুল হক, বীর উত্তম, পরে ব্রিগেডিয়ার) নেতৃত্বে সিলেটের চা-বাগানগুলোর ওপর আক্রমণ চালায়। পরিকল্পনা ছিল চা-বাগানগুলো শত্রুমুক্ত করে আমরা সবাই মিলে সিলেটে অগ্রসর হব। প্রথম বেঙ্গল রেজিমেন্ট আঘাত হানে কেজুড়ীছড়া চা-বাগানে। একই সময় অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্ট আঘাত হানে ফুলতলা-সাগরনাল চা-বাগানের ওপর।’

আবদুল জব্বার চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর ইপিআর সেক্টরের অধীনে। তখন তাঁর পদবি ছিল নায়েব সুবেদার। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। সেখানে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি বৃহত্তর সিলেট জেলায় যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান