বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আবদুল করিম খন্দকার (এ কে খন্দকার) জুন মাস থেকে মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা বহুমাত্রিক। বিশেষত মুক্তিবাহিনীর বিমানবাহিনী গঠনে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য। ষোলোই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তিনি মুক্তিবাহিনীর পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁর নিজ বয়ান থেকে কিছু কথা জানা যাক:

‘২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের পর আমি নিজেকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সদস্য হিসেবে মেনে নিতে পারছিলাম না। আমি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মারগুবের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৩ এপ্রিল স্বাধীনতাযুদ্ধে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু যোগাযোগব্যবস্থার জন্য যেতে পারিনি। ১৫ মে আগরতলায় পৌঁছি। ১৬ মে সকালে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হই। কর্নেল ওসমানীর (আতাউল গনি ওসমানী, পরে জেনারেল) সঙ্গে দেখা হয়।

‘১৯ বা ২০ মে আমরা কয়েকজন দিল্লি যাই ভারতীয় বিমানবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। উদ্দেশ্য ছিল বিমান সংগ্রহ করে বিমানবাহিনী গঠন করা। ভারতীয় বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়। আমরা আমাদের বক্তব্য পেশ করলাম। বুঝতে পারলাম, রাজনৈতিক ও নানাবিধ কারণে তাঁরা আমাদের বিমান দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন না। সময় এলে তাঁরা আমাদের সাহায্য করবেন।

‘তারপর আমরা কলকাতায় এলাম। সিদ্ধান্ত হলো, আমরা স্থলযুদ্ধে অংশগ্রহণ করব। এ সময় আমাকে মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মুক্তিবাহিনীর জন্য রিক্রুটমেন্ট, ট্রেনিং এবং তাঁদেরকে বিভিন্ন সেক্টরে পাঠানো, এসব দায়িত্ব আমার ছিল। অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় করার দায়িত্বও আমার ছিল।

‘অস্ত্রশস্ত্র ও ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সেক্টরে প্রয়োজন অনুসারে দেওয়া হতো। প্রথম মাসে ২-৩ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের ভেতরে পাঠানো হয়। শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ১ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল।

‘গেরিলা বাহিনীতে স্কুল-কলেজের ছাত্র এবং যুবকেরা বেশির ভাগ যোগ দিয়েছিল। ট্রেনিং শেষ করার পর প্রত্যেক সেক্টরে কতজন গেরিলা পাঠানো হবে, তা এবং অস্ত্রশস্ত্রের পরিমাণও হেডকোয়ার্টার্স থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল।

‘গেরিলাযুদ্ধের শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের ভেতরে গ্রাম এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চলাচল মারাত্মকভাবে বিপন্ন হয়ে ওঠে।...মুক্তিবাহিনীর এ সাফল্যই বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পরাজয়ের মূল কারণ।

‘প্রথম দিকে বিমানবাহিনীর সমস্ত পাইলট, টেকনিশিয়ান স্থলযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। পরে স্থির হয় একটা এয়ার ইউনিট গঠন করা হবে। ভারতীয় বিমানবাহিনী আমাদের একটা অটার, একটা অ্যালুয়েট হেলিকপ্টার এবং একটা ডিসি-৩ ডাকোটা বিমান দিয়েছিল।’

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান