বিজ্ঞাপন
default-image

রাতের বেলা আবদুল আলিমসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা ভারত থেকে রওনা হন তাদের লক্ষ্যস্থল অভিমুখে।

মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য ছিল বসন্তপুরের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটিতে আক্রমণ করা। সাতক্ষীরা জেলা সদরের দক্ষিণ-পশ্চিমে দেবহাটা উপজেলার অন্তর্গত বসন্তপুর। মুক্তিযুদ্ধকালে এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটি।

মধ্যরাতে আবদুল আলিম ও তাঁর সহযোদ্ধারা পৌঁছান লক্ষ্যস্থলের কাছে। কিন্তু তাঁরা জানতে পারেন ঘাঁটিতে পাকিস্তানি সেনাসহ সহযোগী কেউ নেই। এটি ছিল অস্বাভাবিক এক ঘটনা। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের দলনেতা সিদ্ধান্ত নেন বাকি রাত সেই গ্রামেই অবস্থানের। এদিকে ওই গ্রামের বিশ্বাসঘাতক কয়েকজন ছিল পাকিস্তানিদের বিশ্বস্ত অনুচর। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি সম্পর্কে খবর পাঠায় নিকটবর্তী পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে।

সকাল হওয়ার আগেই পাকিস্তানিরা গোটা গ্রাম ঘেরাও করে। তখন পাহারায় নিযুক্ত কয়েকজন ছাড়া বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ঘুমিয়ে। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের আকস্মিক আক্রমণ করে। নিমেষে শুরু হয়ে যায় তুমুল যুদ্ধ। দুই পক্ষের গোলাগুলিতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে পড়ে। আকস্মিকভাবে আক্রান্ত হয়েও আবদুল আলিমসহ মুক্তিযোদ্ধারা মনোবল হারাননি। সাহসের সঙ্গে তাঁরা আক্রমণ মোকাবিলা করেন। তাঁদের বীরত্বে পাকিস্তানিরা বিস্মিত হয়। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনা ও সশস্ত্র বিহারিরা দিশেহারা হয়ে পড়ে।

সেদিন প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ চলে। দেড়-দুই ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানিদের বাঙালি সহযোগী বেশির ভাগ পালিয়ে যায়। পাকিস্তানি সেনা ও বিহারিরা মরিয়া হয়ে আক্রমণ করেও ব্যর্থ হয়। পাঁচ ঘণ্টা পর জীবিত পাকিস্তানি ও বিহারীরা রণে ভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু এর মধ্যেই নিহত হয় তাদের অনেক। যুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে শত্রুদের ১৯টি মৃতদেহ পান। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ১৩ জুনের।

বসন্তপুরের যুদ্ধ ছিল গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিরাট এক সাফল্য। অবশ্য এই সাফল্য ছিনিয়ে আনতে গিয়ে আবদুল আলিমের সাতজন সহযোদ্ধাও শহীদ হন। আর আহত হন তিনিসহ ১৪-১৫ জন। যুদ্ধের একপর্যায়ে প্রথমে তাঁর শরীরে বোমার স্প্লিন্টার এবং পরে গুলি লাগে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা বা এর কিছু আগে আবার তাঁর শরীরে গুলি লাগে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। যুদ্ধ শেষে সহযোদ্ধারা তাঁকে ভারতে নিয়ে যান। সুস্থ হয়ে আগস্ট মাসে তিনি পুনরায় যুদ্ধে যোগ দেন।

আবদুল আলিম ১৯৭১ সালে কৃষিকাজ করতেন। মুজাহিদ বাহিনীর প্রশিক্ষণও তাঁর নেওয়া ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাতে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। ভারতের চাকুলিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথমে ৯ নম্বর সেক্টরে. পরে ৮ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান