বিজ্ঞাপন
default-image

টেংরাটিলা সিলেট জেলার অন্তর্গত। পার্শ্ববর্তী ছাতকে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত একটি প্রতিরক্ষা অবস্থান। সুরমা নদীর তীরে ছাতক সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ১২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনীর প্রধান কর্নেল এম এ জি ওসমানী (পরে জেনারেল) নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে ছাতক আক্রমণের নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশ পেয়ে প্রয়োজনীয় রেকি ও পরিকল্পনা ছাড়াই তাঁরা ছাতক আক্রমণ করেন। মূল আক্রমণকারী দল হিসেবে থাকে আলফা ও ব্রাভো কোম্পানি। আক্রমণের সময় দোয়ারাবাজার হয়ে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ধরে যাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কোনো রি-এনফোর্সমেন্ট না আসতে পারে, সে জন্য টেংরাটিলায় অবস্থান নিয়ে চার্লি কোম্পানিকে কাট অফ পার্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। এ কোম্পানিতে ছিলেন আবদুর রাজ্জাক। তাঁরা ১৩ অক্টোবর রাতে সীমান্তের ওপারের বাঁশতলা ক্যাম্প থেকে রওনা হন। বাঁশতলা ক্যাম্প ছিল মুক্তিবাহিনীর ৫ নম্বর সেক্টরের শেলা সাব-সেক্টরের অধীন। ওই সাব-সেক্টরের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী সেদিন সকাল পর্যন্ত টেংরাটিলায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ছিল না। মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত অতিক্রম করে কিছু পথ হেঁটে যান। তারপর নৌকায় করে ভোরে টেংরাটিলায় যাওয়ামাত্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে পড়েন।

পাকিস্তানি সেনারা সব কটি নৌকা লক্ষ্য করে একযোগে গুলি চালাতে থাকে। এমন পরিস্থিতির জন্য মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুত ছিলেন না। চারদিকে গভীর পানি। তাঁদের বেশির ভাগ নৌকা ডুবে যায়। অনেক মুক্তিযোদ্ধা সাঁতার জানতেন না। তখন যুদ্ধের বদলে প্রাণ বাঁচানোই তাঁদের জন্য মুখ্য হয়ে পড়ে। অস্ত্র ফেলে অনেকে সাঁতরে নিরাপদ স্থানের দিকে যেতে থাকেন। চরম প্রতিকূলতার মধ্যে আবদুর রাজ্জাকসহ কয়েকজন ভয় না পেয়ে পানির মধ্যে থেকেই পাল্টা গুলি চালিয়ে যান। এ সুযোগে অনেক মুক্তিযোদ্ধা নিরাপদ স্থানে চলে যেতে সক্ষম হন। সেদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আকস্মিক আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ২৫-২৬ জন আহত হন। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ১৪ অক্টোবর সকালের।

আবদুর রাজ্জাক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি করতেন। ১৯৭১-এ এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রাথমিক প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান এবং পরে জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান