বিজ্ঞাপন
default-image

আনোয়ার হোসেন ১৯৭১ সালে সিলেটে ওয়াপদায় (বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড) চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে তিনিও যোগ দেন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যান। পরে ৯ নম্বর সেক্টরের টাকি সাবসেক্টরে গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন।

বরিশাল জেলার অন্তর্গত গৌরনদী। এর অবস্থান বরিশাল সদর থেকে উত্তরে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ এলাকার বিভিন্ন নদী দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর রসদবাহী লঞ্চ কয়েক দিন পর পর চলাচল করত। লঞ্চের আগে-পিছে পাহারায় থাকত বিশেষ জলযান। এভাবে পাকিস্তানি মিলিশিয়ারা লঞ্চ গন্তব্যে নিয়ে যেত।

১৯৭১ সালের জুলাই মাসের শেষ দিকে আনোয়ার হোসেনসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা গৌরনদী এলাকায় ছিলেন। এ সময় একদিন ভোরে তাঁর দলনেতা খবর পান, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্য রসদবাহী একটি লঞ্চ তাদের এলাকার নদী দিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা দলনেতার নির্দেশে দ্রুত তৈরি হয়ে নদীতীরে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নেন। একটু পর তাঁরা দেখতে পান লঞ্চটি এগিয়ে আসছে।

নদীতীরে আনোয়ার হোসেন ও তাঁর সহযোদ্ধারা অবস্থান নিয়েছিলেন আড়ালে। পাকিস্তানি মিলিশিয়া ও সহযোগী কেউ তাঁদের দেখতে পায়নি। নদীর ওই স্থান ছিল কিছুটা সরু। লঞ্চটি অস্ত্রের আওতায় আসামাত্র গর্জে ওঠে তাঁদের সবার অস্ত্র। পাকিস্তানি মিলিশিয়া ও তাদের বাঙালি সহযোগীরাও পাল্টা গুলি করে। তবে তারা বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। মুক্তিযোদ্ধারা লঞ্চ ও বিশেষ জলযান লক্ষ্য করে দু-তিনটি মর্টারের গোলা ছোড়েন। সেগুলো লঞ্চ বা জলযানে আঘাত করেনি। কিন্তু এতে পাকিস্তানি মিলিশিয়া ও সহযোগীরা ভয় পেয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা লঞ্চ ফেলে বিশেষ জলযানে করে পালিয়ে যায়।

এর কিছুদিন পর আগস্ট মাসের একদিন, আনোয়ার হোসেন ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাতারহাটে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি গানবোটে আক্রমণ করেন। পাকিস্তানি সেনারাও তাঁদের পাল্টা আক্রমণ করে। তখন দুই পক্ষে অনেকক্ষণ যুদ্ধ হয়। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক গোলাগুলি করে তীরে নামে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা ভাঙার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের মুখে তিন-চারজন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে তারা গানবোটে ফিরে যায় এবং গোলাগুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়।

এ যুদ্ধে আনোয়ার হোসেন ও তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধা যথেষ্ট বীরত্ব প্রদর্শন করেন। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কারও কোনো ক্ষতি হয়নি।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান