বিজ্ঞাপন
default-image

লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানার (বর্তমানে উপজেলা) অন্তর্গত বুড়িমারীর অবস্থান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে।

মুক্তিযুদ্ধকালে এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে বা আধিপত্য বিস্তারের জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রায়ই সেখানে আক্রমণ করত। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ জুলাই (মতান্তরে ১০ জুলাই) পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেখানে আকস্মিক আক্রমণ করে।

সেদিন বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ যুদ্ধে অংশ নেয়। একপর্যায়ে তারা ব্যাপকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর চড়াও হয়। প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তাঁদের দখলে থাকা বাংলাদেশ ভূমি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

আনোয়ার হোসেন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা দলের এলএমজিম্যান। প্রচণ্ড সাহস ও অদম্য মনোবল ছিল তাঁর। বিপর্যয়কর ওই মুহূর্তে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে এলএমজিসহ ক্রল করে তিনি একাই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানের ভেতরে ঢুকে পড়েন। তাঁর ব্রাশফায়ারে হতাহত হয় কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা।

এরপর আনোয়ার হোসেন আরও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ঠিক তখনই একঝাঁক গুলি ছুটে আসে তাঁর দিকে। ঝাঁঝরা হয়ে যায় তাঁর শরীর। শহীদ হন তিনি। এই যুদ্ধের বর্ণনা আছে মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান মণ্ডলের লেখায়। তিনি লিখেছেন:

‘...মুক্ত এলাকা পাটগ্রাম দখল করার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হাতীবান্ধা থেকে বুড়িমারী আমাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানের ওপর প্রচণ্ড আঘাত হানে। ইপিআর মোহন মিয়া ও অন্যান্য ইপিআর সদস্যসহ মুক্তিযোদ্ধারা সফলভাবে এই আক্রমণ প্রতিহত করেন।

‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণ তীব্রতর হলে আনোয়ার এলএমজি নিয়ে ক্রল করে শত্রুর অবস্থানের প্রায় কাছে গিয়ে ব্রাশফায়ার করতে থাকলে ১৫-২০ জন শত্রুসেনা নিহত হয়। ঠিক এই অবস্থায় শত্রুবাহিনীর একঝাঁক গুলি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারের দেহ ঝাঁঝরা করে দেয়।’

আনোয়ার হোসেন ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর ইপিআর সেক্টরের অধীন রংপুর উইংয়ে (বর্তমানে ব্যাটালিয়ন)। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই যুদ্ধ শেষে পাটগ্রামে তিনি লড়াই করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান