বিজ্ঞাপন
default-image

নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে একদল মুক্তিযোদ্ধা রাতে সমবেত হন রায়গঞ্জে। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন আনিস মোল্লা। তাঁরা রায়গঞ্জে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের একযোগে আক্রমণ করেন। তাঁদের অস্ত্রের গুলি ও নিক্ষিপ্ত গ্রেনেডের আঘাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের এ আক্রমণ ছিল ভুরুঙ্গামারীতে চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতির অংশ। কুড়িগ্রাম জেলার অন্তর্গত রায়গঞ্জ ও ভুরুঙ্গামারী। এ ঘটনার কয়েক দিন পর ১১ নভেম্বর রাতে তাঁরা ভুরুঙ্গামারীর এক দিক খোলা রেখে তিন দিক দিয়ে একযোগে আক্রমণ করেন। এ আক্রমণে তাঁদের সঙ্গে মিত্রবাহিনীর সেনারাও ছিল। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে।

১২ নভেম্বর সকাল আনুমানিক আটটায় মিত্রবাহিনীর বিমান ভুরুঙ্গামারীর পাশে পাটেশ্বরী রেলস্টেশনের পাকিস্তানি প্রতিরক্ষায় বিমান হামলা চালায়। ধ্বংস হয়ে যায় পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরক্ষা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রেলস্টেশন। হতাহত হয় অনেক পাকিস্তানি সেনা। জীবিত ও আহত সেনারা পালিয়ে যায় ভুরুঙ্গামারী সদরে। তখন আনিস মোল্লার দলসহ মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যান্য দল ভুরুঙ্গামারীর পূর্ব দিকে অবস্থান নিয়ে একযোগে প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। ১৩ নভেম্বর সারা দিন যুদ্ধ হয়। সন্ধ্যার পর রাতেও দুই পক্ষে গোলাগুলি চলে। শেষ রাতে পাকিস্তানি সেনাদের দিক থেকে গোলাগুলি স্তিমিত হয়ে যায়। ১৪ নভেম্বর ভোর হওয়ামাত্র মুক্তিযোদ্ধারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ভুরুঙ্গামারীতে ঢুকে পড়েন।

আনিস মোল্লা চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন রংপুর ইপিআর উইংয়ে (বর্তমানে ব্যাটালিয়ন)। প্রতিরোধযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ৬ এপ্রিল তিস্তা সেতুর যুদ্ধে তিনি যথেষ্ট সাহস প্রদর্শন করেন। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যায়।

১২ এপ্রিল রাতে পাকিস্তানি সেনারা আবার তিস্তা সেতুতে উপস্থিত হয়। ভারী অস্ত্রের সাহায্যে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে গোলা বর্ষণ করে। আনিস মোল্লা ও তাঁর সহযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। কিন্তু ভারী অস্ত্রের গোলাগুলির মুখে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেননি। তারা পিছু হটে টগাইরহাট ও রাজারহাটে অবস্থান নেন। পাকিস্তানি সেনারা তিস্তা সেতু ও লালমনিরহাট দখল করে।

২৩ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা তিস্তা ও লালমনিরহাট থেকে প্রচণ্ড গোলাগুলি করতে করতে কুড়িগ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। তখন আনিস মোল্লা সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের বাধা দেন। তবে বেশিক্ষণ তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের আটকে রাখতে পারেননি। কুড়িগ্রামের পতন হলে তাঁরা ভুরুঙ্গামারীতে আশ্রয় নেন। পরে ভারতে যান। ভারতে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পর ৬ নম্বর সেক্টরের সাহেবগঞ্জ সাবসেক্টরে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান