হেমায়েত উদ্দিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি করতেন। তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার। ১৯৭১ সালের মার্চের মাঝামাঝি থেকে ছুটিতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি বিভিন্ন বাহিনীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েকজনকে নিয়ে একটি ছোট দল গঠন করেন।
এপ্রিলের মাঝামাঝি নিজ এলাকায় যান। একটি ক্যাম্প করেন। তাঁর এলাকা তখনো মুক্ত ছিল। ক্যাম্পে তিনি স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। পরবর্তীকালে এ দলের নাম হয় হেমায়েত বাহিনী।
হেমায়েত অল্প কয়েকজন সহযোদ্ধা নিয়ে ৪ মে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানায় আক্রমণ চালান। তাঁরা বাঙালি-অবাঙালি পুলিশদের কৌশলে আটক করে থানার সব অস্ত্র হস্তগত করেন। হতবুদ্ধি ওসি ও পুলিশরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনা ওই এলাকার জনগণের মনে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলে।
কোটালীপাড়া থানায় অপারেশন করার কয়েক দিন পর (৭ মে) পাকিস্তানি সেনাদের বিরাট একটি দল সেখানে উপস্থিত হয়।
সম্মুখযুদ্ধ করার ক্ষমতা হেমায়েতের দলের ছিল না। ফলে তিনি সাময়িক সময়ের জন্য এলাকা ছেড়ে পেছনে যান। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি শক্তি সঞ্চয় করেন। ২৯ মে রাতে তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে আবার কোটালীপাড়া থানায় আক্রমণ চালান।
তখন থানায় কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা ও অনেক বাঙালি-অবাঙালি পুলিশ ছিল। হেমায়েতের দলের প্রচণ্ড আক্রমণে কিছুক্ষণ যুদ্ধ করে পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ পালিয়ে যায়। কয়েক দিন কোটালীপাড়া মুক্ত থাকে। ৩ বা ৪ জুন পাকিস্তানি সেনারা হেলিকপ্টারের সাহায্যে আবার কোটালীপাড়া দখল করে।
১৭ জুন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দলের সঙ্গে হেমায়েতের দলের বড় ধরনের একটি যুদ্ধ হয়। তখন কোটালীপাড়ার রাজাপুরে ছিল হেমায়েত বাহিনীর ক্যাম্প। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কয়েকটি স্টিলবডি লঞ্চযোগে এসে সেখানে আক্রমণ চালায়। হেমায়েত সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ মোকাবিলা করেন। তাঁদের পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তানিরা পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়।
হেমায়েত উদ্দিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পরবর্তীকালে আরও কয়েকটি যুদ্ধে বীরত্ব দেখান। এর মধ্যে রামশীলের যুদ্ধ অন্যতম। এ যুদ্ধে তিনি গুরুতর আহত হন। ১৪ জুলাই এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে অনেক পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়।
হেমায়েত উদ্দিন স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারেননি। গুলির ক্ষতে পচন ধরায় তাঁকে দেশের বাইরে চিকিত্সার জন্য পাঠানো হয়। তিন বছর তিনি চিকিত্সাধীন ছিলেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান