বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি প্রায়ই মনে পড়ে সৈয়দ রেজওয়ান আলীর। বিশেষভাবে মনে পড়ে তাঁর সহযোদ্ধা রইসউদ্দীন (তিনি পাকিস্তানি বিমানবাহিনীতে চাকরি করতেন, ফরিদপুরে বাড়ি) ও আরও দুজন সহযোদ্ধার কথা। একটি সেতু ধ্বংসের অপারেশনে তাঁরা শহীদ হন। তাঁদের লাশ তাঁরা উদ্ধার করতে পারেননি। এই স্মৃতি তাঁকে এখনো তাড়া করে ফেরে। মনে পড়ে বারবার।

১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের কোনো এক সময়। সঠিক তারিখ সৈয়দ রেজওয়ান আলীর এখন মনে নেই। পাকিস্তানি সেনাদের চলাচল বাধাগ্রস্ত করার জন্য যশোর জেলার অন্তর্গত চুড়ামনকাঠির কাছাকাছি সলুয়া বাজারসংলগ্ন একটি সেতু ধ্বংস করার দায়িত্ব পড়ে তাঁর ওপর। তিনি ছিলেন একটি কোম্পানির কমান্ডার। সীমান্ত থেকে ওই সেতু ছিল কিছুটা দূরে। মাঝখানে ছিল কপোতাক্ষ নদ ও খাল-বিল। এক দিন গভীর রাতে অনেক বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে তিনি একদল মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে সেখানে সেতু ধ্বংস করতে যান। তাঁর দলে ছিলেন সহযোদ্ধা রইসউদ্দীন ও নাম না-জানা আরও দুজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা সাফল্যের সঙ্গে সলুয়া বাজারসংলগ্ন সেতুটি ধ্বংস করেন।

সৈয়দ রেজওয়ান আলীর কোম্পানির বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন গেরিলাযোদ্ধা। ‘হিট অ্যান্ড রান’ পদ্ধতিতে তাঁরা অপারেশন করতেন। অপারেশন শেষে সঙ্গে সঙ্গে চলে যেতেন নিরাপদ স্থানে। কিন্তু সেদিন তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের সাঁড়াশি আক্রমণের মধ্যে পড়ে যান। সলুয়া বাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছিল পাকিস্তানি সেনাদের অনেক বাংকার। সেগুলো ছিল বেশ সুরক্ষিত। বেশির ভাগ দৃশ্যমান ছিল না। গোপন বাংকার সম্পর্কে তাঁদের কাছে কোনো তথ্য ছিল না। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে পাকিস্তানি সেনারা তাদের ওই সব বাংকার থেকে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা গুলি করতে করতে ক্রল করে পিছু হটছিলেন। এ সময় রইসউদ্দীন ও তাঁর আরও কয়েকজন সহযোদ্ধা শহীদ এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। সেদিন পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ এতই তীব্র ছিল যে তাঁরা শহীদ সহযোদ্ধাদের সবার লাশ উদ্ধার করতে পারেননি।

সৈয়দ রেজওয়ান আলী যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টরের কাশিপুর, ছুটিপুর, চৌগাছা, গরীবপুরসহ বিভিন্ন স্থানে। যুদ্ধ করেন কখনো গেরিলা কায়দায়, কখনো অংশ নেন সম্মুখযুদ্ধে। তিনি সর্বশেষ যুদ্ধ করেন গোপালগঞ্জ জেলার ভাটিয়াপাড়ায়। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করলেও ভাটিয়াপাড়ায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা সেদিন আত্মসমর্পণ করেনি। ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে যুদ্ধ চলে।

১৯৭১ সালে সৈয়দ রেজওয়ান আলী ছিলেন পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর করপোরাল। কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানের পেশোয়ারে। সেখান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান