বিজ্ঞাপন
default-image

কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা নদী, তার ওপর রেলসেতু। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ থেকে ওই সেতুর ওপর ওত পেতে বসে আছেন সৈয়দ খানসহ একদল বাঙালি প্রতিরোধযোদ্ধা। তাঁরা বসে আছেন শত্রু পাকিস্তানি সেনাদের অপেক্ষায়। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, সৈয়দ খান বাঙালি নন, অবাঙালি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এ এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। তারপর সেখানে আরও কয়েকটি দিন কেটে গেল। সময় গড়িয়ে এল ১ এপ্রিল। বেলা ১১টার দিকে একদল পাকিস্তানি সেনাকে এগিয়ে আসতে দেখা গেল। এখনো বেশ একটু দূরে তারা। আসছে রংপুরের দিক থেকে। তারা কেউ বুঝতেই পারেনি, সেতুতে কেউ ওত পেতে আছে। তারা প্রতিরোধযোদ্ধাদের গুলির আওতার মধ্যে আসামাত্র একসঙ্গে গর্জে উঠল সব অস্ত্র। পাকিস্তানি সেনাদের সামনে ছিল তাদের এক মেজর এবং এক বাঙালি পুলিশ কর্মকর্তা। তারা প্রতিরোধের কোনো সুযোগই পেল না। মেজর ও বাঙালি পুলিশ কর্মকর্তাসহ চার-পাঁচজন সঙ্গে সঙ্গে নিহত হলো। অনেকে হলো আহত। তারপর শুরু হলো প্রচণ্ড যুদ্ধ। সৈয়দ খানসহ অন্য বাঙালি যোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে পাকিস্তানি সেনাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দিলেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এ দেশে বসবাসকারী অবাঙালিরা (বিহারি) ছিল পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষে। তাদের বেশির ভাগই পাকিস্তানি সেনাদের সক্রিয় সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। এর ব্যতিক্রমও ঘটেছে। অবাঙালি কিছু লোক (হাতেগোনা কয়েকজন) বাঙালিদের পক্ষে ছিলেন। সৈয়দ খান তাঁদের মধ্যে একজন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে লড়াই করেছেন। তিনি ইপিআরে ছিলেন। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন কুড়িগ্রামের চিলমারীতে। কুড়িগ্রাম তখন রংপুর জেলার একটি মহকুমা। চিলমারী বিওপির বাঙালি ইপিআর সদস্যদের সঙ্গে তিনিও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

সৈয়দ খান পরে মুক্তিবাহিনীর একজন যোদ্ধা হিসেবে ৬ নম্বর সেক্টরের সাহেবগঞ্জ সাব-সেক্টরের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সাহসের সঙ্গে লড়াই করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান