বিজ্ঞাপন
default-image

ফেরিঘাটে প্রহরায় পাকিস্তানি সেনা আর তাদের সহযোগীরা। পাশেই তাদের ক্যাম্প। নৌ-কমান্ডো শাহজাহান সিদ্দিকী ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে লিমপেট মাইন লাগালেন দুটি ফেরি আর পন্টুনে। তারপর সাঁতরে রওনা হলেন স্রোতের উজানে, নদীর উত্তর দিক-ঘেঁষা পূর্ব পাড়ে। নৌ-কমান্ডোরা ছইঅলা নৌকার কাছে যখন পৌঁছালেন, তখন রাত আনুমানিক দুইটা ৪০ মিনিট। এর একটু পর শুরু হলো একের পর এক বিস্ফোরণ।

শেষ রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে ফেরিঘাট ও আশপাশের তিন-চার কিলোমিটার এলাকা প্রকম্পিত হলো। নদীর জল ও দুই পাড় কাঁপিয়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো নয়টি লিমপেট মাইন। ফেরিঘাটে প্রহরারত পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি আর ছোটাছুটি। এরপর একটানা গোলাগুলি।

এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট শেষ রাতের, অর্থাত্ ঘড়ির সময় অনুসারে ১৭ আগস্ট ঘটেছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত দাউদকান্দি লাগোয়া মেঘনা নদীর ফেরিঘাট ছিল ঘটনার মূল স্থান। এখন সেখানে নির্মিত হয়েছে সেতু।

এই অভিযানে অংশ নেন আটজন নৌ-কমান্ডো। তাঁদের দলনেতা শাহজাহান সিদ্দিকী। তাঁরা ভারত থেকে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন দাউদকান্দির বন্ধরামপুর গ্রামে। প্রত্যেক কমান্ডোর সঙ্গে একটি করে স্টেনগান, লিমপেট মাইন, ছুরি ও জোড়া ফিনস।

নির্ধারিত দিন রেডিওর গানের মাধ্যমে সিগন্যাল পেয়ে শাহজাহান সিদ্দিকী অপারেশনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। তাঁদের অপারেশন করার কথা ছিল ১৫ আগস্ট মধ্য রাতে। নানা কারণে সেদিন তারা সে অপারেশন করতে পারেননি। পরদিন ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় নৌ-কমান্ডোরা আহারপর্ব শেষে একটি ছইঅলা নৌকায় করে রওনা হলেন দাউদকান্দির ফেরিঘাটের উদ্দেশে। দূরত্ব আট-নয় কিলোমিটার। ফেরিঘাট থেকে দেড়-দুই কিলোমিটার দূরত্বে এসে ছইঅলা নৌকা রেখে তাঁরা উঠলেন খোলা নৌকায়। ওখান থেকে ফেরিঘাটে পৌঁছাতে তাঁদের সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট।

১৯৭১ সালে শাহজাহান সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি নিজ এলাকা হয়ে ভারতে যান। মে মাস থেকে তাঁদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি পরে আরও কয়েকটি স্থানে সাফল্যের সঙ্গে অপারেশন করেন।

২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসেবে অবসর নেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান