বিজ্ঞাপন
default-image

ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার অন্তর্গত মন্ডুমালা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এখানে ঘাঁটি করে। এটি ছিল বেশ সুরক্ষিত। ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট প্রায় ৫০ মুক্তিযোদ্ধা এই ঘাঁটিতে আক্রমণ করেন। তখন ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্ব দেন মো. নাজিম উদ্দীন।

বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন স্বল্প প্রশিক্ষিত। সরাসরি যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁদের ছিল না। মো. নাজিম উদ্দীনের নেতৃত্বে তাঁরা ঘাঁটি আক্রমণ করেন। আকস্মিক আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা কিছুটা হকচকিত হয়। তবে এ ধরনের আক্রমণের জন্য তারা প্রস্তুতই ছিল। সঙ্গে সঙ্গে তারা আক্রমণ প্রতিরোধ করে। পাকিস্তানিদের ভারী অস্ত্রের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা পেরে ওঠেননি। প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমণের মুখে তাঁদের পিছু হটে যেতে হয়।

এতে মনোবল হারাননি মো. নাজিম উদ্দীন। সহযোদ্ধাদের পুনরায় সংগঠিত করে পরদিন ১৭ আগস্ট ভোরে আবারও ওই ঘাঁটি আক্রমণ করেন। সহযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি ঘাঁটির ২০০-২৫০ গজের মধ্যে চলে যান। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের লক্ষ্য করে ব্যাপক গোলাগুলি করে।

মো. নাজিম উদ্দীন সহযোদ্ধাদের বলেন, ‘মৃত্যু আসলে আসুক, তবু আমরা সামনে যাব।’ তাঁর সাহস দেখে উজ্জীবিত হন সহযোদ্ধারা। এরপর তাঁর নেতৃত্বে তাঁরা বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেন এবং আরও কিছুদূর এগিয়ে যান। এ সময় হঠাত্ একটি বোমা আঘাত হানে মো. নাজিম উদ্দীনের ডান পায়ে। তাঁর ডান পায়ের নিচের অংশ সঙ্গে সঙ্গে উড়ে যায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।

গুরুতর আহত হওয়ার পরও মো. নাজিম উদ্দীনের আরও কিছুক্ষণ জ্ঞান ছিল। প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যে তিনি একাই ক্রল করে পাশের পাটখেতে যান। সেখানে যাওয়ার পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। কয়েকজন সহযোদ্ধা অচেতন অবস্থায় তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে শিবিরে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিত্সা দিয়ে তাঁকে কলকাতায় নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিত্সার জন্য মহারাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে তাঁকে পাঠানো হয়।

দুই দিনের যুদ্ধে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং মো. নাজিম উদ্দীনসহ অনেকে আহত হন।

মো নাজিম উদ্দীন ইপিআরে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে দিনাজপুর সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সে হাবিলদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৮ মার্চ বিদ্রোহ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাতে। প্রতিরোধযুদ্ধকালে প্রথমে দশমাইল, পরে চম্পাতলীতে যুদ্ধ করেন। ভারতে যাওয়ার পর কিছুদিন একটি ক্যাম্পের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। মন্ডুমালা যুদ্ধের আগেও তিনি আরও কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে নেতৃত্ব দেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান