বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযোদ্ধাদের দলনেতা মোহাম্মদ সফিকউল্লাহ সকালে নিজেদের প্রতিরক্ষা অবস্থানগুলো সুরক্ষিত করছেন। তখন আনুমানিক বেলা আটটা। এ সময় শুরু হলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণ। প্রথম গোলা এসে পড়ল তাঁর অবস্থান থেকে ২৫০-৩০০ গজ দূরে। বিরাট আগুনের কুণ্ডলী আকাশের দিকে উঠে গেল। ভয় না পেয়ে সহযোদ্ধাদের উদ্দীপ্ত করার জন্য তিনি দাঁড়িয়ে নির্দেশ দিতে থাকলেন। দ্বিতীয় গোলা এসে পড়ল ঠিক তাঁর ১০০ গজ সামনে। এক-দেড় মিনিটের ব্যবধানে তৃতীয় গোলা এসে পড়ল একদম তাঁর কাছাকাছি অবস্থানে। কিছু বোঝার আগেই বাতাসের প্রবল ধাক্কা তাঁকে অনেক ওপরে তুলে দড়াম করে নিচে ফেলে দিল। এ ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বালিয়াডাঙ্গায়।

বালিয়াডাঙ্গা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার অন্তর্গত। এর পশ্চিমে ভারতের পশ্চিম বাংলা রাজ্যের সীমান্ত। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম দিক থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সাতক্ষীরা-যশোর এলাকায় ভারত সীমান্ত বরাবর তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান সুদৃঢ় করতে থাকে। মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নতুন প্রতিরক্ষা অবস্থান দুর্বল করার জন্য আক্রমণের পরিকল্পনা করে।

এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মোহাম্মদ সফিকউল্লাহর নেতৃত্বে এক কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা ১৬ সেপ্টেম্বর সীমান্ত অতিক্রম করে বালিয়াডাঙ্গায় অবস্থান নেন। ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীকে পাল্টা আক্রমণ করে। সেদিন সারা দিন যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধারা মোহাম্মদ সফিকউল্লাহর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। পাকিস্তানি সেনারা বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণ করে। মোহাম্মদ সফিকউল্লাহ সেসব উপেক্ষা করে সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যান। ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে আবার যুদ্ধ শুরু হয়। এদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছোড়া গোলার স্প্লিন্টারে মোহাম্মদ সফিকউল্লাহ আহত হন। আহত হয়েও তিনি যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে চলে যাননি। একজন সহযোদ্ধা তাঁর ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়ার পর ওই অবস্থাতেই ঘণ্টা খানেক তিনি যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। এরপর তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। কয়েক ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরলে তিনি আবার যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে থাকেন। এতে তাঁর সহযোদ্ধারা উদ্দীপ্ত হন।

মোহাম্মদ সফিকউল্লাহ ১৯৭১ সালে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে বাংলার শিক্ষক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি এতে যোগ দেন। পরে তিনি ৮ নম্বর সেক্টরের হাকিমপুর সাব-সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁকে ক্যাপ্টেন উপাধি দেওয়া হয়।

মোহাম্মদ সফিকউল্লাহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্নেল পদে থাকাকালে ১৯৯৬ সালে অবসর নেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান