বিজ্ঞাপন
default-image

মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার জুন মাস থেকে মুক্তিবাহিনীর ৬ নম্বর সেক্টরে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বৃহত্তর রংপুর ও বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ নিয়ে ছিল এ সেক্টর। এর অধীনে অসংখ্য যুদ্ধ হয়। এই সেক্টরের বেশ কয়েকটি সাবসেক্টর ছিল এবং এগুলোর অবস্থান ছিল বাংলাদেশ ভূখণ্ডে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তা দখল করতে পারেনি।

খাদেমুল বাশারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরিচালনায় ৬ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসংখ্য অপারেশন করেন। এর মধ্যে নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংঘটিত ভুরুঙ্গামারীর যুদ্ধ একটি। ৬ নম্বর সেক্টরে গণবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন আখতারুজ্জামান মণ্ডল। তিনি একটি দলের দলনেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে লেখা তাঁর বইয়ে খাদেমুল বাশারের কথা আছে। তিনি লিখেছেন,

‘সেক্টর কমান্ডার এম কে বাশার ৬ নম্বর সেক্টরের প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার অবিচল আস্থা অর্জন করেছিলেন।...রোজা শুরু হওয়ার আগের দিন দুপুরের পর তিনি আমাদের ঘাঁটিতে এলেন। ভুরুঙ্গামারীর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ অভিযান পরিকল্পনার জন্য সন্ধ্যার কিছু আগেই সাবসেক্টর অফিসে ক্যাপ্টেন নওয়াজিশসহ আমাদের কয়েকজনকে নিয়ে আলোচনায় বসলেন।

‘সেক্টর কমান্ডারের পরিকল্পনা ও নির্দেশ অনুযায়ী রোজার আগের রাতে ভুরুঙ্গামারীর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হলো। রাত নয়টায় অভিযানে অংশগ্রহণকারী সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি আবেগময় বক্তৃতা করলেন। “জয় বাংলা, বাংলার জয়” এবং “মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি” গানটি টেপ রেকর্ডারে বাজিয়ে শোনানো হলো।

‘অভিযানে অংশগ্রহণকারী দেড় শ মুক্তিযোদ্ধা প্রত্যেকের সঙ্গে তিনি হাত মেলালেন এবং ব্যক্তিগতভাবে আদর করলেন।...অপারেশন থেকে আমরা ফিরে না আসা পর্যন্ত তিনি এক মুহূর্তও স্থির হয়ে বসে থাকেননি। যুদ্ধের ময়দানে বিভিন্ন সময় তাঁর সাহসিকতাপূর্ণ অসাধারণ কৃতিত্বের প্রমাণ আমরা পেয়েছি।’

মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার পাকিস্তানি বিমানবাহিনীতে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে রাডার স্কোয়াড্রনের অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে। পদবি ছিল উইং কমান্ডার। ১৯৭১-এর মে মাসের শুরুতে আরও কয়েকজনের সঙ্গে পালিয়ে ভারতে যান এবং যুদ্ধে যোগ দেন।

তিনি স্থলযুদ্ধে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাঁকে মুক্তিবাহিনীর ৬ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্থলযুদ্ধের অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতা, দক্ষতা ও সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে মোকাবিলা করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান