গজারিয়া সেতু নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার অন্তর্গত। বেগমগঞ্জ থানার নান্দিয়াপাড়াসহ আশপাশের বড় একটি এলাকা। এটি ১৯৭১ সালের জুনের শেষ পর্যন্ত মুক্ত ছিল। এই এলাকায় ছিলেন সুবেদার লুত্ফর রহমানের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা। এ দলেই ছিলেন নূরুজ্জামান। দেশের ভেতরে অবস্থান করে তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। এপ্রিল থেকে তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এর মধ্যে বিপুলাশ্বর স্টেশন, সোনাইমুড়ী, বগাদিয়া ফেনাকাটা, মীরগঞ্জ, মীরেরহাট, বড় কামতায় সংঘটিত যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। ১৩ জুন নূরুজ্জামানের দলনেতা সুবেদার লুত্ফর রহমান খবর পান, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল নান্দিয়াপাড়া দখলের জন্য আসছে। সেদিন তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করতে গজারিয়া সেতুতে অবস্থান নেন। সেখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁদের চার ঘণ্টা যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে পাঁচজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ক্ষতি না হলেও দুজন গ্রামবাসী পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী সেদিন সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়।
এরপর পাকিস্তানি সেনারা আরও কয়েকবার নান্দিয়াপাড়া দখলের জন্য আসে। প্রতিবারই মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিরোধ করতে থাকেন। একদিন (সঠিক তারিখ কারও জানা নেই) পাকিস্তানি সেনারা আর্টিলারির প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করতে করতে এগোতে থাকে। এতে মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এই সুযোগে পাকিস্তানি সেনারা দ্রুত অগ্রসর হতে থাকে। তখন নূরুজ্জামান কয়েকজন সহযোদ্ধাসহ সামনে এগিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রবর্তী দলকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু নূরুজ্জামান ও তাঁর সহযোদ্ধারা সংখ্যায় ছিলেন অনেক কম। পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড আক্রমণে নূরুজ্জামানের সহযোদ্ধারা বিপর্যস্ত হয়ে পশ্চাদপসরণ করতে থাকেন। নূরুজ্জামান ও তাঁর আরেক সহযোদ্ধা বিচলিত না হয়ে বীরত্বের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করছিলেন। এ সময় তাঁরা দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। পরে মুক্তিযোদ্ধারা পুনর্গঠিত হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করেন। কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা চলে যায়। যাওয়ার সময় তারা নূরুজ্জামান ও তাঁর সহযোদ্ধার মরদেহ নিয়ে যায়। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের জুনের শেষ অথবা জুলাইয়ের প্রথমার্ধের।
নূরুজ্জামান চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালের মার্চে ছুটিতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি এতে যোগ দেন। যুদ্ধ করেন নিজ এলাকাতেই।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান