বিজ্ঞাপন
default-image

অন্ধকারে হঠাত্ একসঙ্গে এক ঝাঁক অস্ত্রের গর্জন। ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি। আকস্মিক আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা সবাই অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। তৌহিদউল্লাহ একেবারে শত্রুর নাগালের মধ্যে। পজিশন নেওয়ার আগেই কয়েকটি গুলি এসে লাগে তাঁর পায়ে। নিমেষে তাঁর শরীর যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যায়। চোখের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে সহযোদ্ধা আজিজ শহীদ হলেন। আহত হলেন আরও কয়েকজন সহযোদ্ধা। সহযোদ্ধা কেউ কেউ পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করলেন। বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে তাঁদের গোটা দল। এমন অবস্থায় পশ্চাদপসরণ ছাড়া তাঁদের সামনে আর কোনো বিকল্প থাকল না।

১৯৭১ সালের ৭ বা ৮ নভেম্বর। ফেনী জেলার বিলোনিয়ার অনেক জায়গায় ছিল পাকিস্তানি সেনাদের মজবুত প্রতিরক্ষাব্যূহ। ৩১ অক্টোবর থেকে এই এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছিল। কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি। এর মধ্যেই যুদ্ধ চলছিল। সেদিনও টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিল। সন্ধ্যার পর চিথলিয়ার কাছে মুহুরী নদীর পশ্চিমে ধানীকুণ্ডের দক্ষিণে তৌহিদউল্লাহসহ ২০ জনের একটি দল রেকি করতে যান। তাঁর হাতে ছিল এলএমজি। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল শত্রুর অবস্থান ও শক্তি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। দুর্ভাগ্যবশত তাঁরা শত্রুর অ্যামবুশে পড়ে যান। পরে তাঁদের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ইনাম-উজ-জামান (বীর বিক্রম, পরে মেজর জেনারেল) খবর পেয়ে সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের বড় একটি দল পাঠান। তারা পাকিস্তানি সেনাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের এই আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।

তৌহিদউল্লাহ মুক্তিবাহিনীর একজন সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। তিনি ২ নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাব-সেক্টর এলাকার অন্তর্গত ফুলগাজী, মুন্সিরহাট, বন্ধুরহাটসহ আরও কয়েকটি জায়গায় যুদ্ধ করেন। ২১ জুন পর্যন্ত বিলোনিয়া মুক্ত ছিল। সে সময় তিনি ফেনীর দক্ষিণে একটি প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন। ২১ জুন তিনটি হেলিকপ্টার এসে তাঁদের অবস্থানের ৫০০ গজ দূরে নামে। তাঁরা তখন ভেবেছিলেন, হেলিকপ্টারগুলো মুক্তিবাহিনীর। আসলে সেগুলো ছিল শত্রুর হেলিকপ্টার। যখন হেলিকপ্টার থেকে পাকিস্তানি সেনারা নামতে থাকে, তখন তাঁদের ভুল ভাঙে। তৌহিদউল্লাহ তাঁর এলএমজি দিয়ে হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করেন। কিন্তু তার আগেই হেলিকপ্টার অনেক ওপরে উঠে যায়। সেদিন সেখানে দুই পক্ষে ব্যাপক গোলাগুলি হয়।

তৌহিদউল্লাহ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ষষ্ঠ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল পাকিস্তানের পেশোয়ারে। মার্চ মাসে তিনি ছুটিতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যোগ দেন যুদ্ধে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান