বিজ্ঞাপন
default-image

পাটেশ্বরীর অবস্থান রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্তে। একটু দূরেই তিস্তা নদী। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে এখানে প্রতিরোধযোদ্ধাদের একটি প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিল। তাঁরা ইপিআর-মুজাহিদ-আনসার ও ছাত্র-যুবক। ১৯৭১ সালের ২৬ মে পাকিস্তানি সেনারা পাটেশ্বরী প্রতিরক্ষা অবস্থানে ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করলে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে সেখানে টিকে থাকা সম্ভব হলো না।

২৭ মে। ভোর। থানা হেডকোয়ার্টারে বসে আছেন প্রতিরোধযোদ্ধাদের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নওয়াজেশসহ কয়েকজন। এমন সময় দুজন লোক সেখানে এল। তারা জানায়, পাকিস্তানি সেনারা ধরলা নদী অতিক্রম করেনি। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের আবারও পাটেশ্বরীতে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন। আসলে ওই দুজন ছিল পাকিস্তানি সেনাদের অনুচর। পাকিস্তানি সেনারাই তাদের মিথ্যা কথা বলে বর্ণিত ঘটনাস্থলে নিয়ে যেতে পাঠিয়েছিল এবং তারা তাদের অ্যামবুুশ রেঞ্জের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের এনে তাঁদের নিশ্চিহ্ন করার অপেক্ষায় ছিল। তাদের সেই কৌশল কাজে লাগে।

ওই দুজনের সংবাদের ভিত্তিতে প্রতিরোধযোদ্ধারা আবার পাটেশ্বরী প্রতিরক্ষা অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। একটি ট্রাক, একটি পিকআপ ও একটি জিপে রওনা হলেন প্রায় ১০০ জন যোদ্ধা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন মুজাহিদ বাহিনীর তমিজউদ্দীন প্রামাণিক।

প্রতিরোধযোদ্ধাদের বহনকারী গাড়ি সেখানে পৌঁছামাত্র পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের আক্রমণ করে। প্রতিরোধযোদ্ধারা দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রাথমিক হকচকিত অবস্থা কাটিয়ে তাঁরা গাড়ি থেকে লাফিয়ে নিচে নামেন এবং পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা চালান। তাঁরা খণ্ড খণ্ড যুদ্ধে লিপ্ত হন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে শেষ পর্যন্ত তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। শহীদ হন বেশ কয়েকজন। এর পরও তাঁদের অন্যতম অধিনায়ক মুজাহিদ বাহিনীর অনারারি ক্যাপ্টেন তমিজউদ্দীন প্রামাণিক সংঘর্ষস্থল ত্যাগ না করে একাই সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যান। তাঁর গুলিতে বেশ কয়েকজন শত্রুসেনা হতাহত হয়। এই অসম যুদ্ধের একপর্যায়ে তিনিও শত্রুর গুলিতে শহীদ হন।

এ ঘটনার পর প্রতিরোধযোদ্ধাদের পাটেশ্বরীর প্রতিরোধব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। পাকিস্তানি সেনারা নাগেশ্বরী বাজারে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয়।

তমিজউদ্দীন প্রামাণিক ১৯৭১ সালে গাইবান্ধার মুজাহিদ ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন। মার্চের প্রথমার্ধে তিনি ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ইপিআর ও ছাত্র-যুবকদের সমন্বয়ে গড়ে তোলা প্রতিরোধযোদ্ধাদের দলে যোগ দেন। পরে তাঁদের সঙ্গে এপ্রিল-মে মাসে কুড়িগ্রাম জেলার কয়েকটি স্থানে প্রতিরোধযুদ্ধে তিনি অংশ নেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান