বিজ্ঞাপন
default-image

জিল্লুর রহমান ইপিআরে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি এতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে চলে যান। সেখানে তাঁকে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ডি কোম্পানিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অক্টোবর থেকে জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়ে আবার তিনি ভারতে চলে যেতেন।

১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে কমলগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর সরাসরি যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধ চলে কয়েক দিন। এখানে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত এক ঘাঁটি। ১ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে আলীনগর চা-বাগানে আক্রমণ করেন। সেখানে প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিল এক দল পাকিস্তানি সেনা। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলে ছিলেন জিল্লুর রহমান। তাঁরা নিঃশব্দে চা-বাগানে প্রবেশ করে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালান। পাকিস্তান সেনাবাহিনীও পাল্টা আক্রমণ করে। দুই পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিপর্যয় ঘটে। তারা পরাজিত হয়। চা-বাগান মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে।

এরপর মুক্তিযোদ্ধারা ভানুগাছ এলাকায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করেন। ৫ ডিসেম্বর ভানুগাছ এলাকায় দীর্ঘ সময় যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর অনেকে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হন। জিল্লুর রহমানসহ কয়েকজন পিছু না হটে যুদ্ধ চালিয়ে যান। এ সময় তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছোড়া গোলার আঘাতে শহীদ হন। সেদিন যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর আরও কয়েকজন শহীদ হন। তাঁদের কমলগঞ্জের আলীনগর ইউনিয়নের কামুদপুর গ্রামে সমাহিত করা হয়।

শহীদ জিল্লুর রহমানের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। মুক্তিযোদ্ধারা পরদিনই ভানুগাছ এলাকা থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বিতাড়িত করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান