বিজ্ঞাপন
default-image

তখন ভোর। বাংলাদেশের অভ্যন্তরের এক গোপন শিবিরে ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধারা কেউ ঘুমিয়ে, কেউ বা জেগে। এমন সময় খবর এল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল তাঁদের শিবিরের পাশের গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাবে। শিবিরে ছিলেন খালেদ সাইফুদ্দীন আহমেদসহ ৩৫ থেকে ৩৬ জন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওই দলকে আক্রমণ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এরপর ঘটতে থাকে একের পর এক নানা ঘটনা। শেষে মুক্তিযোদ্ধারাই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অ্যামবুশে পড়েন। তখন যুদ্ধে শহীদ হন খালেদ সাইফুদ্দীন আহমেদসহ আটজন মুক্তিযোদ্ধা। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ৫ আগস্টের। ঘটেছিল বাগোয়ানে।

বাগোয়ানের অবস্থান চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর জেলার সীমান্তে। এর পাশেই যোধপুরে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন শিবির। অদূরে নাটুদহের হাজার দুয়ারী স্কুলে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটি। আরেকটি ঘটনা সেদিন ঘটে। কিছুক্ষণ পর মুক্তিযোদ্ধারা খবর পান, বাগোয়ান গ্রামের মাঠ থেকে দুজন রাজাকার জোর করে ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আসলে সেটা ছিল মিথ্যা খবর। খালেদ সাইফুদ্দীন আহমেদসহ সাতজন মুক্তিযোদ্ধা বাগোয়ানে যান। পরে তাঁরা আরেকটু এগিয়ে যান রতনপুর ঘাটে। সেখানে তাঁদের এক সহযোদ্ধা বোকামি করে একটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। সঙ্গে সঙ্গে ওপার থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসে তাঁদের দিকে। অবস্থা বেগতিক দেখে মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত পিছিয়ে বাগোয়ানে যান এবং সেখানকার একটি বাগানে আশ্রয় নেন। এর মধ্যে আরও ২৪ জন মুক্তিযোদ্ধা সেখানে আসেন। তারপর তাঁরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে একদল রওনা হলেন রতনপুরের দিকে, আরেক দল কাভারিং পার্টি হিসেবে থেকে গেলেন পেছনে।

রতনপুরের দিকে এগোতে থাকা দলে ছিলেন খালেদ সাইফুদ্দীন আহমেদসহ ১৫ জন। তাঁরা সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ায় চরম বিপদে পড়েন। পথে পাকিস্তানি সেনারা ইংরেজি ‘ইউ’ শেপে অ্যামবুশ করে লুকিয়ে ছিল। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের আক্রমণ করে। এতে প্রথমেই শহীদ হন দু-তিনজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাঁদের বেশির ভাগ অস্ত্রও ছিল সেকেলে। অন্যদিকে পাকিস্তানি সেনারা ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। খালেদসহ দু-তিনজন বুঝতে পারলেন, তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে পারবেন না। ততক্ষণে পাকিস্তানি সেনারা খুব কাছাকাছি এসে তাঁদের ঘিরে ফেলেছে। তারা খুব কাছ থেকে খালেদ সাইফুদ্দীন আহমেদ ও অন্যদের গুলি করে হত্যা করে।

খালেদ সাইফুদ্দীন আহমেদ ১৯৭১ সালে কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতে গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের লালবাজার সাব-সেক্টর এলাকায়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান