১৯৭১ সালের অক্টোবরের প্রথম দিক। খবিরুজ্জামানসহ তিনজন নৌ-কমান্ডো ভারত থেকে রওনা হলেন মাদারীপুরের উদ্দেশে। টেকেরহাট ফেরিঘাট আক্রমণ করাই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। নিরাপত্তার জন্য তাঁরা রাতে চলাচল করতেন। আবার যাত্রাপথও তাঁদের অচেনা। অনেক কষ্টে যুদ্ধাস্ত্র, মাইনসহ তাঁরা মাদারীপুরের রাজৈরে গোপন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পৌঁছালেন সাত দিন পর। সেখানে অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর তাঁরা অক্টোবরের শেষ দিকে টেকেরহাট ফেরিঘাট আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের নিরাপত্তা দেবে স্থল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল।
নির্ধারিত দিন রাত একটায় খবিরুজ্জামান ও অন্য দুই নৌ-কমান্ডো বুকে মাইন বেঁধে পানিতে নেমে এগিয়ে যেতে থাকেন। খবিরুজ্জামানের দুই সহযোদ্ধা তাঁদের টার্গেট খুঁজে পেলেও তিনি তাঁর টার্গেট (টহলবোট) খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এ জন্য তিনি পানি থেকে মাথা উঁচু করে তা খুঁজতে থাকলে পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে দেখে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের ছোড়া এক ঝাঁক গুলিতে খবিরুজ্জামানের মাথা ও দেহ ঝাঁঝরা হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তিনি শহীদ হন। অপারেশনস্থলে ঠিকমতো রেকি না হওয়ায় এই বিপর্যয় ঘটে। রেকি করার দায়িত্ব ছিল স্থলযোদ্ধাদের ওপর। তাঁরা সে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। অন্য দুজন কমান্ডো সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের মাইনের আঘাতে ফেরিঘাটের পন্টুন সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়।
ঘটনার তিন দিন পর খবিরুজ্জামানের সহযোদ্ধারা জানতে পারেন যে টেকেরহাট থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের এক স্থানে নদীতে ডুবুরির পোশাক পরা একটি লাশ ভেসে আছে। তখন তাঁরা সেখানে গিয়ে খবিরের লাশ শনাক্ত করেন; কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভয়ে তাঁরা খবিরুজ্জামানের লাশ দাফন করতে না পেরে ডুবুরির পোশাক খুলে কুমার নদেই ভাসিয়ে দেন।
খবিরুজ্জামান নৌ-কমান্ডোর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর চট্টগ্রামে অপারেশনে প্রথম অংশ নেন। তাঁর পরবর্তী অভিযান ছিল খুলনার চালনা বন্দরে।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান