বিজ্ঞাপন
default-image

ওয়ালী উল্লাহর দলনেতা লুত্ফর রহমান খবর পেলেন, যেকোনো সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দল তাঁদের এলাকায় আসতে পারে। তিনি ওয়ালী উল্লাহকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে দ্রুত অ্যামবুশ করার নির্দেশ দিলেন। ওয়ালী উল্লাহ ফাঁদ পাতলেন বগাদিয়ায়। এ সময় তাঁর দলনেতা এগিয়ে গেলেন পাকিস্তানি সেনাদের গতিবিধি দেখতে। দলনেতা ফিরে আসার আগেই অ্যামবুশস্থলে একটি পিকআপ ভ্যানে করে এসে নামল পাকিস্তানি সেনারা। ওয়ালী উল্লাহ দলনেতার অপেক্ষায় না থেকে আক্রমণ চালালেন। আকস্মিক আক্রমণে বিপর্যস্ত পাকিস্তানি সেনারা। উল্টে পড়ে গেল পিকআপ ভ্যান। নিহত হলো দুই পাকিস্তানি সেনা। পিকআপ ভ্যানে ছিল একজন জেসিওসহ ছয়জন সেনা। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে এল আরও কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। যুদ্ধ চলল কয়েক ঘণ্টা। পাল্টাপাল্টি আক্রমণে ওয়ালী উল্লাহর রণকৌশল ও দুঃসাহসিকতায় পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে হতাহত সেনাদের নিয়ে চৌমুহনীর দিকে চলে যায়। যুদ্ধে ওয়ালী উল্লাহ নিজে সামান্য আহত হলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। একটি গুলি তাঁর কপাল ঘেঁষে চলে যায়।

ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ৯ মে। বগাদিয়া নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার অন্তর্গত। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ এলাকার একদল মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার মেজর লুত্ফর রহমানের নেতৃত্বে নিজ এলাকাতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকেন। এই দলে ছিলেন ওয়ালী উল্লাহ।

ওয়ালী উল্লাহ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। ডেপুটেশনে ক্যাডেট কলেজে প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখন তাঁর পদবি ছিল নায়েব সুবেদার। ২৫ মার্চ তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ছিলেন। সেখান থেকে পালিয়ে নিজ এলাকায় এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। নোয়াখালীর চাটখিল, বেগমগঞ্জ, চন্দ্রগঞ্জ, সোনাইমুড়িসহ কয়েকটি জায়গায় তিনি যুদ্ধ করেন।

১৯৭৮ সালে চাকরি থেকে তিনি অবসর নেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান