বিজ্ঞাপন
default-image

এয়ার আহমদ চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালের প্রথম দিকে মা-বাবা পাশের গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে বিয়ের কথা পাকা করে তাঁকে চিঠি লেখেন। চিঠি পেয়ে ছুটি নিয়ে বাড়ি যান তিনি। এর মধ্যে শুরু হয়ে যায় অসহযোগ আন্দোলন। কয়েক দিন পর মুক্তিযুদ্ধ। তাঁর আর বিয়ে করা হয়নি। যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে।

ফেনী জেলার অন্তর্গত বিলোনিয়া। বিলোনিয়া থেকে রেললাইন চলে এসেছে ফেনী পর্যন্ত। পাশ দিয়ে সমান্তরাল কাঁচা রাস্তা। অক্টোবর মাসের শেষ দিক থেকে সেখানে একটানা বৃষ্টি হচ্ছিল। সেদিনও টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে চিথলিয়া-পরশুরামের মাঝামাঝি এক স্থানে ভোররাতে রেললাইনের পাশের রাস্তা ঘেঁষে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহল দলকে আক্রমণ করার জন্য। সকাল হলেই রেলট্রলিতে শুরু হবে পাকিস্তানি সেনাদের টহল। তারপর ভোরের আলো ফুটল। সময় দ্রুত গড়িয়ে যাচ্ছে। এমন সময় চিথলিয়ার দিক থেকে অস্পষ্ট শব্দ এল।

এয়ার আহমদ ও তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধা পরিষ্কার দেখতে পেলেন একটা রেলট্রলি। ট্রলিতে বসা বেশ কজন পাকিস্তানি সেনা। তাদের সঙ্গে এক অফিসার। তারা বুঝতেই পারেনি মুক্তিবাহিনী এত কাছে ওত পেতে বসে আছে। মুক্তিযোদ্ধা যাঁরা ওখানে অবস্থান নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এয়ার আহমদই ছিলেন সবচেয়ে সাহসী। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করে আসছিলেন।

রেলট্রলিটা এগিয়ে আসছে। আওতার মধ্যে আসামাত্র এয়ার আহমদ ও তাঁর সহযোদ্ধাদের অস্ত্র একসঙ্গে গর্জে উঠল। প্রথম গুলি করেন এয়ার আহমদই। একজন পাকিস্তানি সেনাও প্রাণে বাঁচতে পারল না। গোলাগুলির শব্দে চিথলিয়া ও পরশুরামে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা দুই দিক থেকেই গোলাগুলি শুরু করে।

এদিকে আক্রমণের তাত্ক্ষণিক সাফল্যের আনন্দে বাংকার থেকে উঠে এয়ার আহমদ দৌড়ে গেলেন অদূরে পড়ে থাকা নিহত পাকিস্তানি এক সেনা অফিসারের দিকে। গোলাগুলির কথা মুহূর্তের মধ্যে ভুলে গেলেন। নিহত পাকিস্তানি অফিসারের কোমরে বাঁধা খাপ থেকে পিস্তলটি বের করে নিজের পকেটে রাখলেন। এরপর সেই অফিসারকে টেনে আনতে থাকলেন নিজেদের বাংকারের দিকে। ঠিক তখনই চিথলিয়ার দিক থেকে পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া একটি বুলেট এসে লাগল তাঁর মাথায়। নিমেষে এয়ার আহমদের শরীরটা কুঁকড়ে গেল। তিনি শহীদ হলেন। দিনটি ছিল ৯ নভেম্বর। সহযোদ্ধারা তাঁকে সমাহিত করেন দক্ষিণ পৈথারা গ্রামে। এ গ্রাম তাঁর নিজ গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে।

এয়ার আহমদ ২ নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাব-সেক্টর এলাকার পরশুরাম, মুন্সিরহাট, ফুলগাজী, সালধরসহ কয়েক স্থানে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান