বিজ্ঞাপন
default-image

আরব আলীসহ তাঁর অধিনায়ক খবর পেলেন একদল পাকিস্তানি সেনা কাশিপুরে আসছে। কাশিপুর তাঁদের আওতার মধ্যে। অধিনায়ক বললেন পাকিস্তানি সেনাদের অ্যামবুশ করতে। মুক্তিযোদ্ধারা তৈরিই ছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগই ইপিআর সদস্য।

সীমান্তসংলগ্ন ক্যাম্প থেকে তাঁরা দ্রুত চলে এলেন কাশিপুরে। সেখানে আছে একটি সেতু। আরব আলী তাঁর দল নিয়ে অবস্থান নিলেন ওই সেতুর পশ্চিম প্রান্তে। একটু পর সেতুর পূর্ব প্রান্তে হাজির হলো একদল পাকিস্তানি সেনা। তারা সেতু অতিক্রম করে নিশ্চিন্তে হেঁটে যেতে থাকে পশ্চিম দিক বরাবর। তারা কল্পনাও করেনি মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি। গুলির আওতায় আসামাত্র গর্জে উঠল আরব আলীর দলের সবার অস্ত্র।

নিমেষে হতাহত হলো বেশ কজন পাকিস্তানি সেনা। আকস্মিক আক্রমণে হকচকিত ও ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানি সেনারা যে যেভাবে পারল, পজিশন নিয়ে শুরু করল পাল্টা আক্রমণ। যুদ্ধ চলল অনেকক্ষণ ধরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে গেল। যারা পালাতে পারল না, তারা আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে থাকল।

কাশিপুর যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত। ১৯৭১ সালের ২৭ বা ২৮ জুনের ঘটনা। শতাধিক পাকিস্তানি সেনা লরি ও জিপে করে সেখানে টহল দিতে আসে। সেতুর পূর্ব প্রান্তে দূরে এক জায়গায় গাড়ি রেখে হেঁটে সেতু অতিক্রম করে তারা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দিকে। আরব আলীরা যেখানে অ্যামবুশ করেছিলেন, সেখান দিয়েও যাচ্ছিল একদল পাকিস্তানি সেনা। সেনাদের দল তাঁদের অ্যামবুশের ভেতর আসামাত্র গুলি শুরু করেন তাঁরা। এতে নিহত হয় চার-পাঁচজন।

যুদ্ধের পর তাঁরা আত্মগোপন করা পাকিস্তানি সেনাদের খুঁজতে বের হন। সেখানে কাছেই ছিল একটি পাকা বাড়ি। চারদিকে এর উঁচু দেয়াল। আরব আলীর মনে হলো, পাকিস্তানি সেনারা এ বাড়িতেই লুকিয়ে থাকতে পারে। কিছুক্ষণ পর ওই বাড়ির ভেতর থেকে ভেসে এল হইচইয়ের শব্দ। সেখানে লুকিয়ে ছিল কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা ওই পাকিস্তানি সেনাদের গুলি করেন। এর মধ্যে একজন ছিলেন লেফটেন্যান্ট। সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।

আরব আলী ১৯৭১ সালে দিনাজপুর ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টারের অধীনে সীমান্ত বিওপিতে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যোগ দেন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধে আহত হন। ভারতে চিকিত্সা নিয়ে সুস্থ হয়ে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টর এলাকায়। গোয়ালহাটি, ছুটিপুর, বর্নি, গঙ্গাধরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় তিনি সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান