বিজ্ঞাপন
default-image

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ভোমরা সাতক্ষীরা জেলার অন্তর্গত। সীমান্তরেখা বরাবর আছে একটি বন্যা প্রতিরোধ বাঁধ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সাতক্ষীরা ও যশোর এলাকার কয়েক স্থানে প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে একদল মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের মো. সালাহউদ্দীনের নেতৃত্বে ভোমরায় প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন।

২৮ মে শেষ রাতে (তখন ঘড়ির কাঁটা অনুসারে ২৯ মে) প্রায় দুই কোম্পানি পাকিস্তানি সেনা মুক্তিবাহিনীর ভোমরা বাঁধের অবস্থানে আক্রমণ করে।

আবু তাহের মো. সালাহউদ্দীন সহযোদ্ধাদের নিয়ে প্রস্তুতই থাকতেন। পাকিস্তানি সেনাদের উপস্থিতি তিনি সঙ্গে সঙ্গে টের পান। তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালান। এরপর দুই পক্ষে ব্যাপক যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তুলনায় তাঁরা ছিলেন প্রায় অর্ধেক। এতে সালাহউদ্দীন ও তাঁর সহযোদ্ধারা বিচলিত হননি। তাঁরা অত্যন্ত সাহস ও দক্ষতার সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিহত করেন। তাঁদের বীরত্বে পাকিস্তানি সেনারা পিছিয়ে যায়।

কয়েক ঘণ্টা পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পুনরায় সংগঠিত হয়ে আবার আক্রমণ করে। এর মধ্যে নতুন কিছুসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা সেখানে আসে। তাতে পাকিস্তানি সেনাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। সালাহউদ্দীন এবারও সহযোদ্ধাদের নিয়ে সফলতার সঙ্গে আক্রমণ মোকাবিলা করেন। তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কয়েকজন সহযোদ্ধা বাঁধের ওপর থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের সাহায্যে গেরিলা কায়দায় সুইপিং গোলাগুলি শুরু করেন। এতে সামনে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টারত বেশ কিছু পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়।

২৯ মে থেমে থেমে সারা দিন যুদ্ধ চলে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী একের পর এক আক্রমণ চালিয়েও আবু তাহের মো. সালাহউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধা দলকে বাঁধ থেকে উচ্ছেদ করতে পারেনি। সারা দিনের এ যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেনসহ অনেকে নিহত এবং ব্যাটালিয়ন অধিনায়কসহ অসংখ্য ব্যক্তি আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে একজন শহীদ ও আট-নয়জন আহত হন। নিহত পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের মৃতদেহ পাকিস্তানি সেনারা উদ্ধার করতে পারেনি। মৃতদেহটি সালাহউদ্দীন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন।

আবু তাহের মো. সালাহউদ্দীন চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে উপ-অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ২০৪ ফিল্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে। এর অবস্থান ছিল ঢাকা সেনানিবাসে। তখন তাঁর পদবি ছিল ক্যাপ্টেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কয়েক দিন পর ঢাকা সেনানিবাস থেকে পালিয়ে যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলে প্রতিরোধযুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন। ভারতে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পর তিনি প্রথমে ৮ নম্বর সেক্টরের ভোমরা এলাকায় যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্ব দেন। পরে মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক রূপ পেলে ৫ নম্বর সেক্টরের বালাট সাবসেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান