বিজ্ঞাপন
default-image

আখতার আহমেদ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে চাকরি করতেন। চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন কুমিল্লা সেনানিবাসে। এখানে ছিল চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। মার্চের মাঝামাঝি সম্ভাব্য ভারতীয় হামলা মোকাবিলার কথা বলে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সেনানিবাসের বাইরে পাঠানো হয়। তাঁকেও যুক্ত করা হয় এই ইউনিটের সঙ্গে।

২৫ মার্চের আগে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একাংশের অবস্থান ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। আখতার আহমেদও ছিলেন সেখানে। ২৭ মার্চ মেজর সাফায়াত জামিলের (বীর বিক্রম, পরে কর্নেল) নেতৃত্বে তাঁরা বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। এ বিদ্রোহে আখতার আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

খালেদ মোশাররফের (বীর উত্তম, পরে মেজর জেনারেল) নেতৃত্বে ২ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ যখন তীব্রতর হচ্ছিল, তখন তাঁর সেনাদলে আহত ও নিহত সেনার সংখ্যাও বেড়ে চলছিল। মুক্তিবাহিনীর নিয়মিত সেনা ও গণবাহিনীর সদস্যদের চিকিৎসার বন্দোবস্ত ছিল না। খালেদ মোশাররফের সঙ্গে ছিলেন ক্যাপ্টেন আখতার আহমেদ। অফিসার বেশি না থাকায় তিনি তাঁকেও একটা কোম্পানির কমান্ডার বানিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়োগ করেন। ক্যাপ্টেন আখতার যোদ্ধা হিসেবে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন।

খালেদ মোশাররফের যোদ্ধাদলে দ্রুত চিকিৎসার অভাবে অনেক নিয়মিত সেনা ও গণবাহিনীর সদস্যরা রক্তক্ষয়ে মারা যেতে থাকেন। তিনি নিজের সেক্টরেই চিকিৎসাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ক্যাপ্টেন আখতারকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ডেকে এনে তাঁর হেডকোয়ার্টারের কাছে হাসপাতাল স্থাপনের নির্দেশ দেন তিনি। ঢাকা থেকে কিছুসংখ্যক ছেলেমেয়ে ওই সেক্টরে এসে আশ্রয় নেন। দু-একজন শিক্ষানবিশ চিকিত্সক ছিলেন তাঁদের মধ্যে। তাঁদের নিয়ে ক্যাপ্টেন আখতার কয়েকটি তাঁবুতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রথম বাংলাদেশ হাসপাতালের ভিত্তি স্থাপন করেন। হাসপাতালটি ছিল একটি সুন্দর বাগানের ভেতর উঁচু ও শান্ত পরিবেশে।

হাসপাতালটির নাম ছিল ‘বাংলাদেশ হাসপাতাল’। এটি মে মাসে আগরতলার মতিনগরে স্থাপন করা হয়। জুলাইয়ে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে হাসপাতালটি সীমান্ত এলাকা থেকে অপেক্ষাকৃত দূরবর্তী এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। পরে বিশ্রামগঞ্জে আবার স্থানান্তর করে তা আরও প্রসারিত করা হয়। তখন এই হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ছিল ২০০। অন্যান্য সেক্টরের চেয়ে ২ নম্বর সেক্টরের বাংলাদেশ হাসপাতালের চিকিত্সাব্যবস্থা ছিল অনেক ভালো ও কার্যকর। এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় আখতার আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

আখতার আহমেদের ছোট ভাই মঞ্জুর আহমেদও বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান