বিজ্ঞাপন
default-image

বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়া খানের দ্বিতীয় দফা বৈঠকের পর পরবর্তী আর কোনো আলোচনার সময় নির্ধারণ করা হয়নি। এ নিয়ে জনমনে উৎকণ্ঠা জন্মায়। অবশেষে রাতে ঘোষণা করা হয়, তৃতীয় দফা বৈঠক হবে কাল বেলা ১১টায়।

১৮ মার্চও ঢাকার রাজপথে দিনভর ছাত্র-শ্রমিক-জনতার মিছিল চলতে থাকে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিভিন্ন সংগঠন ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতাসংগ্রামের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য শপথ নেয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল শহীদ মিনারে সাবেক বিমানসেনাদের শপথ গ্রহণ। ঢাকায় পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকেরা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন।

সারা দিন ধরে মিছিলের পর মিছিল করে উৎকণ্ঠিত মানুষ বঙ্গবন্ধুকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানাতে তাঁর বাসভবনে ভিড় করে। বঙ্গবন্ধু সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে বৈঠক থেকে উঠে গিয়ে সমবেতদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি সবাইকে চরম প্রস্তুতি নিয়ে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘তোমাদের ওপর আঘাত এলে তা প্রতিহত করে শত্রুর ওপর পাল্টা আঘাত হানো।’

বিপুল সংখ্যায় দেশি-বিদেশি সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। বাসভবনের সামনে জনতার ঢল দেখিয়ে বিদেশি সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বন্ধুরা, দেখুন, আমার দেশের মানুষ আজ মুক্তির প্রতিজ্ঞায় কী অটল-অবিচল। কার সাধ্য আছে এই উত্তাল জনসমুদ্রকে রোখে?’

রাতে শেখ মুজিব সেনাবাহিনী তলব-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রকাশ্য তদন্ত। যে তদন্ত কমিশনের কথা ঘোষণা করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আমার উত্থাপিত দাবির পরিপূরক নয়। তাই আমি এই কমিশন মেনে নিতে পারি না।’

শ্রমিকদের ওপর সেনা-হামলা: সকালে সেনাসদস্যরা তেজগাঁও ও মহাখালীতে শ্রমিকদের ট্রাকে হামলা চালায়। তারা নিরস্ত্র ট্রাক আরোহীদের নির্মমভাবে প্রহার করে তাদের টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেয়। এর প্রতিবাদে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। ঘটনার পর আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের উপনেতা ও দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম হয়রানির শিকার লোকজনের প্রতি সমবেদনা ও সেনাসদস্যদের প্রতি নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেন।

ইয়াহিয়ার আহ্বানে ভুট্টোর অস্বীকৃতি: পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে শাসনতন্ত্র নিয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার ঢাকায় যেতে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের কাছে কয়েকটি বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে কোনো জবাব না পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

‘ইরনা এলিজাবেথ’ নামে বাংলাদেশের জন্য খাদ্যশস্যবাহী আরেকটি জাহাজও এই দিন চট্টগ্রামের বদলে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়।

সূত্র: ইত্তেফাক, পূর্বদেশসংবাদ, ১৯ মার্চ ১৯৭১

গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান