বিজ্ঞাপন
default-image

বাংলাদেশকে ভারতের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার খবর সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে গেছে খুব দ্রুতই। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধী অবস্থান নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রে এর প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। মার্কিন সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে সদস্যদের দেওয়া বক্তব্য ও তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় বিষয়টি স্পষ্ট। ভারতের স্বীকৃতির বিষয়টি প্রচারিত হওয়ার পর ৬ ডিসেম্বর সিনেটে দেওয়া এক বক্তব্যে সিনেটর রবার্ট বায়ার্ড (পশ্চিম ভার্জিনিয়া থেকে নির্বাচিত ডেমক্র্যাটদলীয় সদস্য) বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতি ভারতের স্বীকৃতি যুদ্ধের আগুনে ইন্ধন জোগাবে। তিনি বলেন, ‘আজ সকালের রেডিওর খবরে জানতে পারলাম যে পূর্ব পাকিস্তানকে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই উদ্যোগ নিশ্চিতভাবেই পাকিস্তানকে ক্ষুব্ধ করবে এবং তা যুদ্ধের আগুনে তেল ঢেলে দেবে।’

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ৯ ডিসেম্বরে (১৯৭১) দেওয়া বক্তব্যে ডেমক্র্যাটদলীয় সদস্য হেনরি হেলস্টস্কি (নিউজার্সি থেকে নির্বাচিত) অবশ্য বিপরীত দাবি তুলেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে পূর্ণ কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান করা। প্রতিনিধি পরিষদে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘জনাব স্পিকার, আজ আমি একটি সাধারণ হাউস প্রস্তাব উত্থাপন করছি, তা হলো বাংলাদেশকে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে পূর্ণ কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান করা উচিত।’

হেনরি হেলস্টস্কি বলেন, ‘ওই অঞ্চলের বিশ্বস্ততার প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগকে গ্রহণ এবং পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণকে ঘৃণ্যভাবে দমনের দায়ে পাকিস্তান সরকারকে দায় স্বীকার করতে বলা উচিত। ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান যে ঘটনা ঘটান, তা সেখানে গৃহযুদ্ধের সূচনা ঘটায় এবং সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-পাকিস্তানের শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্ক অখণ্ড পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ শেষ করে দিয়েছে। জনাব স্পিকার, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে, এটা কেবল সময়ের ব্যাপার। আজ সকালে ওই অঞ্চল থেকে আসা প্রতিবেদন এটাই জানান দিচ্ছে যে ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ঘিরে ফেলেছে এবং প্রায় পরাস্ত করে ফেলেছে। এই বাহিনীর হাতে খুব শিগগির বিজয় ধরা না দেওয়ার আর কোনো কারণই দেখছি না।

‘যুক্তরাষ্ট্র যদি শুধু বাস্তবতার নিরিখেই কোনো পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এ ক্ষেত্রে এই উত্তরণের বিষয়টি তাদের মাথায় নিয়ে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। তবে আরেকটি বড় ব্যাপার হলো, আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে যে গোঁড়ামি আছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ইয়াহিয়া খানের দমনমূলক শাসনব্যবস্থার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে মুখোমুখি হতে হবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রকৃত ঘটনাবলির।’

বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতির পর ৯ ডিসেম্বর (১৯৭১) প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান দলীয় সদস্য পল এন ম্যাকক্লস্কি (ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত) এক বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘নতুন জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের অবশ্যই স্বীকৃতি দিতে হবে।’ ম্যাকক্লস্কি তাঁর ওয়াশিংটনের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া না-দেওয়ার ব্যাপারে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, গত বছর অনুষ্ঠিত মুক্ত ও অবাধ নির্বাচনে বিজয়ী ১৬৭ জন প্রতিনিধির মধ্যে সরকার চালানোর জন্য যথেষ্টসংখ্যক প্রতিনিধি বেঁচে আছেন কি না। তাঁরা যদি বেঁচেই থাকেন, তবে ঔপনিবেশিকবিরোধী ঐতিহ্য বজায় রেখে আমাদের উচিত বাংলাদেশকে একটি নতুন জাতির স্বীকৃতি দেওয়া।

সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র