বিজ্ঞাপন
default-image

‘জনগণের অধিকার’ নামক বিপ্লবী মতবাদ নিয়ে বহু কথা আমরা শুনি। জানি না, এসব বিপ্লবী কী করবেন যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হবে—এই স্বাধীনতা তো অবশ্যম্ভাবী। বাংলাদেশ স্বাধীন হবে, শুধু এ জন্য নয় যে ভারত সহায়তা দিচ্ছে—ভারত দেশটিকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে—বরং এ কারণে যে সাত কোটি মানুষের মানবিক চেতনা ধ্বংস করা যায় না। তারা তো সব চেষ্টাই করেছে। সামরিক পথে চেষ্টা করেছে। কাল্পনিক প্রশাসনের পথেও গিয়েছে। তারা বুলেটিন, ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছে। কোনো কিছুতেই কোনো ফল হয়নি।

এখন নিরাপত্তা পরিষদের সভা বসেছে আর ভারতের অসাধুতা নিয়ে লম্বা-চওড়া বক্তৃতা শুনতে হচ্ছে আমাদের—বলা হচ্ছে, আমরা নাকি নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে, পরাশক্তি হয়ে উঠতে পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করছি। অসংখ্য বইপত্র, আইনজ্ঞ আর অ্যাকাডেমিকদের বরাত দেওয়া হচ্ছে। তারা নিজেরাই নিজেদের ভেঙেছে। আমরা শুধু তার পরিণতির মোকাবিলা করছি।

এখন একমাত্র প্রশ্ন হলো, আমরা একে কীভাবে থামাই? আজ আমরা যার কথা শুনলাম, সেটা পাকিস্তানের কোনো প্রতিনিধির কথা নয়; আজ আমরা শুনলাম এক আধা-পাকিস্তানি প্রতিনিধির কথা। বাকি অর্ধেক আমাদের ডাকের প্রতীক্ষায়। নিরাপত্তা পরিষদ নিজের প্রজ্ঞায় যদি তাকে না ডাকে তাহলে তো পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না, হবে অবনতি।

অস্ত্রবিরতি নিয়ে বহু কথা বলা হলো। এ-সংক্রান্ত এমন কিছু দলিলপত্রে আমি চোখ বুলিয়েছি। কার কার মধ্যে অস্ত্রবিরতি? এক তথাকথিত অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে আমরা কি পাকিস্তানি সৈন্যদের ছেড়ে দেব যেন তারা তুলকালাম চালাতে পারে; ঢাকায়, চট্টগ্রামে আর অন্য সব জায়গায় বেসামরিক মানুষকে হত্যা করতে পারে? এ রকম অস্ত্রবিরতিই কি আমরা কামনা করছি? সৈন্যরা কি যেকোনো বিশ্বাস—তা সভ্যতার কিংবা অন্ধতা যাই হোক—তা নিয়েই লড়াই করা নাকি এই যে দায়িত্ব পালনের শপথ তারা নিয়েছে, তা থেকে তাদের মুক্ত করে দিতে হবে, যাতে তারা নারীদের হত্যা করতে পারে আর ধর্ষণ করতে পারে ১৯, ১৭, ১৫, ১৩, ১১ অথবা তারও কমবয়সী মেয়েদের?

সূত্র: একাত্তরের ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের রাষ্ট্রদূত সমর সেনের দেওয়া ভাষণের অংশবিশেষ