বিজ্ঞাপন
default-image

একাত্তরে এ দেশের ওপর দিয়ে প্রচণ্ড এক ঝড় বয়ে গিয়েছিল। মার্চ থেকে ডিসেম্বর—এ কয়টি মাস বারুদের গন্ধে বাতাস হয়েছিল ভারী। চারদিকে অগুনতি লাশ, আর্তনাদ আর স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা। বেঁচে থাকার প্রবল আকুতি নিয়ে এক কোটি মানুষ চৌদ্দপুরুষের ভিটে ছেড়ে সীমান্তের ওপারে আশ্রয় নিয়েছিল। এর মধ্যেই চলেছিল সাধারণ মানুষের প্রতিরোধ সংগ্রাম, সশস্ত্র লড়াই, মুক্তিযুদ্ধ। একটি মানবশিশু জন্ম নিতে যে কয়েক মাস সময় লাগে, প্রায় ততটুকু সময় নিয়ে আমাদের এই দেশ চোখ মেলে তাকিয়েছিল, জেগে উঠেছিল ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে।

তবে যুদ্ধটা শুধু ৯ মাসের ছিল না। এর আছে একটি বিস্তৃত পটভূমি। আবার ১২-১৩ দিনের যুদ্ধে পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারতের সামরিক বাহিনী দেশ স্বাধীন করে দিয়েছে, এটাও সত্যের অপলাপ। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে শুরু হওয়া সশস্ত্র প্রতিরোধ পর্বের একপর্যায়ে এসে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী তার সবটুকু সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছিল। তবে এটি অস্বীকার করা যাবে না, যুদ্ধের শেষ দিকে ভারতের সামরিক উপস্থিতি পাকিস্তানের পতন ত্বরান্বিত করেছিল।

একাত্তরের মার্চ ছিল আমাদের জাতীয় জীবনে একটি বাঁক বদলের মাস। মার্চজুড়েই দেশ ছিল উত্তাল। ২৬ মার্চ আমাদের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা দিবস। তবে এটা সত্য যে, এ দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই পয়লা মার্চ ঘোষণা করে দিয়েছিল স্বাধীনতা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণে স্পষ্টই বলা হয়েছিল— এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। যদিও তিনি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসেননি। দর–কষাকষির দরজাটা খোলা রেখেছিলেন। তাঁর এই কৌশলগত অবস্থানটি নিয়ে পরে অনেক বিতর্ক এবং ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। মার্চ আমাদের অনেকের স্মৃতিতে এখনো অম্লান এবং বাংলাদেশের জন্ম-ইতিহাসের সঙ্গে তা জড়িয়ে আছে। একাত্তরের মার্চকে বাদ দিয়ে এ দেশে ইতিহাসচর্চা অসম্ভব। মার্চ এলেই আমরা স্মৃতিকাতর হই।

২.

যে জনগোষ্ঠী একদা এককাট্টা হয়ে ১৯৪৬ সালে পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়ে মুসলিম লীগকে একচেটিয়া জয় এনে দিয়েছিল, তারা কেন হঠাৎ ঘুরে দাঁড়াল—এ প্রশ্নের অনেকটাই মীমাংসা হয়ে গেছে একাত্তরে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এক বছর না পেরোতেই এ দেশের মানুষের মোহভঙ্গ হতে শুরু করেছিল। মুসলিম লীগের মধ্যে গণতন্ত্রচর্চার অভাব, ক্ষমতাসীনদের কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বারবার ক্ষমতার হাতবদল, পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য দিন দিন বেড়ে যাওয়া, জাতিগত নিপীড়ন এবং সবশেষে একটি অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়া আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহা স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিল। ১৯৪৭ সালের অবস্থানটি পাল্টাতে যে বিরাট মনোজাগতিক পরিবর্তন দরকার হয়েছিল, তার জন্য অপেক্ষা করতে হলো ২৪ বছর। কেবল ধর্মের গাঁথুনি দিয়ে যে একটি রাষ্ট্র তৈরি করা যায় না, এ বোধোদয় যেদিন হলো, সেদিন থেকেই একটি ভিন্নরকম রাষ্ট্রের চাহিদা তৈরি হলো মানুষের মনে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব তা ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে গেল। এর মধ্যে সংযুক্ত ছিল অনেক স্রোতধারা। শেষমেশ প্রায় সব ধারা এসে এক মোহনায় মিশে গেল, যার প্রতিধ্বনি শোনা গেল ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে। এই স্লোগান হলো একটি জনগোষ্ঠীর জেগে ওঠার প্রেরণা, যা সব শ্রেণি, পেশা ও ধর্মের মানুষকে এক সুতোয় গাঁথতে পেরেছিল।

৩.

যে প্রশ্নটি বারবার ঘুরেফিরে আসে তা হলো—আমরা কী চেয়েছিলাম। এখান থেকেই উৎসারিত হয়, কী ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এ নিয়ে আছে নানা মত, নানান উপলব্ধি।

এ তো অস্বীকার করার জো নেই, পাকিস্তানি শাসনামলে আমাদের ছিল নানা অপ্রাপ্তি। আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভেবেছিল, ভারত ভাগ হলে সব প্রশ্নের মীমাংসা হবে। তা হয়নি। আমরা বুঝতে পারলাম, ভুল ইঞ্জিনে আমাদের বগি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এ দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও না পাওয়ার ক্ষোভ অনেকটাই মূর্ত হয়ে উঠেছিল ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে প্রচার হওয়া আওয়ামী লীগের একটি পোস্টারে। এর শিরোনাম ছিল ‘সোনার বাঙলা শ্মশান কেন?’ সাধারণ মানুষ অত তত্ত্বকথা বোঝে না, গবেষণার বই পড়ে কিংবা পাঠচক্র করে মনের পরিবর্তন ঘটায় না। ওটা এলিটদের কাজ। সহজে বোঝা যায়, নজরকাড়া এমন শব্দাবলি দিয়ে প্রথম তৈরি হলো ‘ছয় দফা’, যাকে শেখ মুজিব ‘আমাদের বাঁচার দাবি’ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। আঞ্চলিক বৈষম্যের স্বরূপ ফুটিয়ে তোলার জন্য ‘সোনার বাঙলা শ্মশান কেন’ পোস্টারটি যেন স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল তৈরি করল।

মানুষ চেয়েছিল বৈষম্য থাকবে না, বেঁচে থাকার ন্যূনতম পণ্যগুলো সহজলভ্য হবে। মানুষ খেয়ে–পরে সুখে-শান্তিতে থাকবে। এটুকুই তো ছিল চাওয়া। পাকিস্তানি শাসকেরা তাদের দখলদারি জিইয়ে রাখার জন্য সব সময় ধর্মের দোহাই দিত। সমালোচকদের বরাতে জুটত ‘ইসলাম–বিরোধিতার’ অপবাদ। এই ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির সমান্তরাল ধারায় অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ার একটা তাড়না তৈরি হলো। অর্থাৎ কোনো বৈষম্য থাকবে না, মানুষ দুবেলা পেট পুরে খেতে পারবে এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে সমাজে কোনো বিভাজন চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এসব ধারণা ও প্রতিশ্রুতিকে অবলম্বন করেই মানুষ আওয়ামী লীগ তথা শেখ মুজিবের প্রতি আস্থাশীল হলো। তিনি হলেন জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, প্রিয় নায়ক, বঙ্গবন্ধু। এ চেতনাই মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিল বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়াতে, তাঁকে অবিংসবাদী নেতা হিসেবে মেনে নিতে এবং ‘আমি যদি হুকুম দেবার না-ও পারি—তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা’ করার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে।

২৫ মার্চের অতর্কিত সেনা আক্রমণের পর হতবিহ্বল মানুষের কানে কানে গোপন মন্ত্র পৌঁছে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন হয়নি, সে রকম প্রক্রিয়াও তৈরি হয়নি। মানুষ বুঝে গেছে কী করতে হবে।

‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে পাঠ করা হলো। গুটি কয়েক মানুষ ছাড়া কেউ জানত না, ওই দলিলে কী লেখা আছে। ওটা না দেখে, না পড়েই মানুষ জনযুদ্ধে শামিল হয়েছে। ওটা দেখার সুযোগ হয়েছে ডিসেম্বরে দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পর। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ওই ঘোষণাপত্রে খোঁজার ব্যাপারটি নিতান্তই একাডেমিক। ঘোষণা পড়ে বা কারও ঘোষণা শুনে মানুষ যুদ্ধ করেনি। ২৫ মার্চ রাতের আক্রমণটি মুহূর্তের মধ্যে একটি জাতিকে পুরোপুরি তৈরি করে দিয়েছিল।

৪.

তারপরও এই প্রশ্নটির মুখোমুখি হই আমরা নিরন্তর— কী ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। রাষ্ট্রীয় চার নীতি? সে তো এসেছে আরও পরে। ২৫ মার্চের আগে বঙ্গবন্ধুর নানান বক্তৃতা-বিবৃতিতে যে কয়টি কথা বেরিয়ে এসেছিল, তা হলো—গণতন্ত্র চাই, সমাজতন্ত্র চাই, ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করা যাবে না। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে এবং অক্টোবরে নির্বাচনের আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বেতার-টিভি ভাষণেও এই শব্দগুলো ছিল। বাহাত্তরে এসে শব্দগুলো অনেকটা পরিমার্জিত হয়ে পরে সংবিধানে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে গ্রন্থিত হয়—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ।

‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি নিয়ে এখনো বিতর্ক আছে। ওই সময় পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছিল, রাজনীতিতে ধর্ম টেনে আনা যাবে না। এখন এর এমন ব্যাখ্যাও দাঁড় করানো হয়—রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। ইউরোপীয় ধারার ‘সেক্যুলারিজম’ বলতে যা বোঝায়, আক্ষরিক অর্থে ১৯৭০ সালের আওয়ামী লীগের প্রচারে তেমন ব্যাখ্যা ছিল না, পরেও তার চেষ্টা করা হয়নি। এ দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাহাত্তরের সংবিধানে নিষিদ্ধ হলো। ধর্ম কিন্তু পরিত্যাজ্য হয়নি। রাষ্ট্রীয় সব অনুষ্ঠানে পবিত্র গ্রন্থসমূহ থেকে পাঠের চল হলো। এটিকে সর্বধর্মসমন্বয়ের একটি রাজনৈতিক অবস্থান বলা যেতে পারে। কিন্তু মানুষের মন থেকে সাম্প্রদায়িকতা একেবারে মুছে গেছে, তা বলা যাবে না। এ জন্য অনেক সময় দরকার, দরকার কয়েকটি প্রজন্মের।

৫.

স্বাধীনতার পাঁচ দশক হতে চলল। আমরা খাতা খুলে হিসাব মেলাতে চাই। আমাদের কী গেল, কী পেলাম। কিংবা রক্তের ঋণ কি শোধ হয়েছে? দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমাদের মুক্তি কি এসেছে?

আমরা গর্ব করে বলি, আমাদের একটি স্থায়ী ঠিকানা আছে। পাঁচ দশক পরও আমরা দেখি লাখ লাখ বস্তিবাসী, ভাসমান মানুষ, যাদের বুলডোজারের তাড়া খেয়ে এখান থেকে ওখানে ছুটে বেড়াতে হয়। সব কর্মক্ষম মানুষ কি সম্মানজনক কাজের সংস্থান করতে পেরেছে? ফুটপাতে তাড়া খাওয়া ফেরিওয়ালাদের কথা ভাবলেই মনে হয়, একদিকে শহরকে সুন্দর করার আয়োজন, অন্যদিকে দেখি ওই মানুষগুলোর পেছনে একটি করে নিরন্ন পরিবার। এখনো মানুষ চাল-ডাল-পেঁয়াজ-বিজলির দাম নাগালের মধ্যে পাওয়ার দাবিতে পথে নামে। স্কুলে খেলার মাঠ তো দূরের কথা, অনেক জায়গায় মাথার ওপর ছাদও নেই।

আমাদের আত্মপরিচয়ের সংকট কি কেটেছে? আমরা আগে বাঙালি না মুসলমান, এ নিয়ে তর্কের তো শেষ নেই। সব জায়গায় একটা ভাগ ভাগ ভাব। একটি বিভক্ত জাতি এগোতে পারে কতদূর? একসময় মনে হতো, একাত্তরে অনেক প্রশ্নের মীমাংসা হয়ে গেছে। সমাজ ও রাজনীতির মধ্যে জিইয়ে থাকা অলঙ্ঘনীয় দেয়ালগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, অনেক প্রশ্নেরই মীমাংসা হয়নি। একটি রাষ্ট্র সাবালক হতে কত বছর সময় নেয়? ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়েছিল ত্রয়োদশ শতকে। সেখানেও অনেক দেশে গণতন্ত্র নড়বড়ে। এই অঞ্চলে রাষ্ট্র হিসেবে আমরা নবীন। পাঁচ দশকে আমরা এগিয়েছি কতটুকু?

আমরা একদা শুনেছিলাম, দেশ স্বাধীন হলে সুখ আসবে। সমাজতন্ত্র বোঝাতে গেলে ইসলামী ছাত্রসংঘের, এমনকি ছাত্রলীগের ডানপন্থী অংশটিও যুক্তি দিত—হাতের পাঁচ আঙুল কি সমান হয়? তারপরও নিজেকে প্রশ্ন করতে পারি, এই পাঁচ দশকে আমরা এমন কী পেয়েছি, যা আমরা স্বাধীন না হলে পেতাম না? আমরা জানি আমাদের সুযোগ ও সম্ভাবনা বেড়েছে, উৎপাদন বেড়েছে, জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। কিন্তু এ তো একটি আপেক্ষিক ধারণা। আমাদের আশপাশের দেশগুলোতেও একই জিনিস ঘটছে। উন্নয়নের সার্বিক সূচকে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মানদণ্ডেও।

অর্জন অবশ্যই আছে অনেক। অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। তাদের ঘামে আয় করা টাকায় আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল আছে। গণমাধ্যম বিকশিত হয়েছে—সংখ্যায় ও মানে। নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। আমরা তো এগুলো চেয়েছিলাম।

কিন্তু আমরা যা চাইনি, তাও ঘটছে। আমাদের সমাজের বুনন, মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা প্রতিনিয়ত ঝাঁকুনি খাচ্ছে। রাজনীতিতে সুবিধাবাদ এবং মেধাহীন নেতৃত্ব জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। রাজনৈতিক আন্দোলন এখনো সহিংস। মানুষ পেটানোর মধ্যে এখনো অনেকে আনন্দ পায়। গাড়ি ভাঙচুর করে পুলক অনুভব করে। এই স্বাধীনতা তো আমরা চাইনি।

৬.

জীবন থেমে থাকে না। আমাদের পথ চলতেই হয়। যাদের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের পর, তাদের একটি বড় অংশ অন্য রকম চিন্তা করে। তারা অনেকেই সংস্কারমুক্ত, বিজ্ঞানমনস্ক। লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির ওপর তাদের আস্থা নেই। সাম্প্রতিক কয়েকটি সাড়া জাগানো আন্দোলনে তার চিহ্ন দেখা গেছে। অতীতের জঞ্জাল নয়, ভবিষ্যতের দিগন্তরেখার দিকে তাদের চোখ। তাদের আছে বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি। এরা যখন দেশের হাল ধরবে, এরাই পারবে সমাজের খোলনলচে পাল্টে দিতে।

আমরা অনেক কালক্ষেপণ করেছি। হয়তো আমরা একটা ব্যর্থ প্রজন্ম। বুড়িগঙ্গার মতো ছোট্ট একটা নদী আমরা বাঁচাতে পারিনি। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে যুবশক্তির আবাহনের জন্য।

স্বাধীনতা নিছক স্লোগান ছিল না। এ ছিল বাঁচার অবলম্বন। সবাই একসঙ্গে উঠে দাঁড়াবে, একসঙ্গে বাঁচবে—এই প্রতীতি নিয়ে আমাদের সন্তানেরা অচলায়তন ভেঙে একদিন বদলে দেবে দেশটা। ওটাই হবে স্বাধীনতার চেতনার সত্যিকার বাস্তবায়ন। তখনই আমরা জবাব পেয়ে যাব, কেন আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম।

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১৯, ১২ চৈত্র ১৪২৫, মঙ্গলবার, প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।