বিজ্ঞাপন

ভূমিকা

default-image

১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি সরদার ফজলুল করিমের লন্ডনবাসী বন্ধু ও রাজনৈতিক সহকর্মী আবদুল মতিন তাঁকে লিখিত এক পত্রের মাধ্যমে জানতে চান, মুক্তিযুদ্ধকালে কীভাবে তিনি পাকিস্তানি ঘাতকদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন।

এই চিঠিতে ১৯৭১ সালের ১ জুন লন্ডনের পাকিস্তান হাইকমিশনের মুখপত্র পাকিস্তান নিউজ-এর মাধ্যমে পূর্ববাংলার ৫৫ জন বুদ্ধিজীবীর নামে প্রচারিত বিবৃতি শেষে সরদার ফজলুল করিমের স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে আবদুল মতিন বলেন, তিনি (সরদার ফজলুল করিম) নিশ্চয়ই স্বেচ্ছায় স্বাক্ষর দান করেননি।

উল্লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে তথাকথিত চরমপন্থীরা পূর্ববঙ্গের স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে একতরফাভাবে স্বাধীনতার দাবিতে রূপান্তর করার চেষ্টা করছে এবং যারা এর বিরোধিতা করে তারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়।

১৮ জানুয়ারি লেখা চিঠির সংক্ষিপ্ত উত্তর ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি দিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে তাঁর তত্কালীন অসহায় অবস্থার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই অসহায় অবস্থায় অসহায়ভাবেই একদিন সামরিক বাহিনীর অনুচরগুলো মৃত্যুর হুমকি দিয়ে দস্তখত করিয়েছিল ওদের বানোয়াট বিবৃতিতে।’

১৯৭২ সালের ১৯ জুলাই লিখিত পরবর্তী পত্রে তিনি বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন। এই চিঠিটি তাঁর অনুমতিক্রমে প্রকাশ করা হলো।

ভাই মতিন,

তোমার ৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি তারিখে লেখা চিঠি আর ১৯৭০ সালের নভেম্বরের চিঠি—দুখানাই আজ সামনে নিয়ে বসেছি। তোমার চিঠির জবাব দিতে পারিনি, তবু তুমি আমার খবরাখবর রেখেছ। তোমাদের Bangladesh News letter আমার খুব ভাল লেগেছে। তোমার পাঠানো স্বাধীনতা সংখ্যা পেয়েছি। কয়েকদিন আগে আর একটা সংখ্যাও পেয়েছি। তোমাকে চিঠি লিখতে পারিনি। কিন্তু তোমার চিঠি পাওয়ার পর থেকে সব সময়ে ভেবেছি চিঠি লিখব—আর প্রতিদিন লিখতে না পারার অপরাধবোধ লেখাকে ক্রমান্বয়ে অসম্ভব করে তুলছিল। আসলে আমার মন একান্তভাবে চাচ্ছিল, তুমি হঠাত্ হয়ত একদিন আবার ঢাকা চলে আসবে। তখন সামনা সামনি আমরা বসব। হাতে হাত মেলাতে পারব। আর তাতে বলতে না পারা অনেক কথা বলা হয়ে যাবে। যেমন হঠাত্ তোমাকে ৬৯ সালে ঢাকায় একবার পেয়েছিলাম। বস্তুতঃ আমাদের রাজনীতির অর্থাত্ বাস্তব জীবনে এত সব পরিবর্তন ঘটে গেছে যে তোমার কাছে চিঠি লিখতে বসলে সে পরিবর্তনের কথা কতটুকু বলব আর কেমন করে বলব। তাই ভেবে পাইনে অবশ্য রাজনৈতিক পরিবর্তনের কথা বলারও প্রয়োজন করে না। কারণ তুমি তা জানো। এবং তোমরা সবাই মিলে এই দুর্দিনে যদি আমাদের দুর্দশার কথা বিশ্ববিবেকের কাছে তুলে না ধরতে, তাহলে আমাদের পুরো অস্তিত্বটাই হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।

আমার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অবস্থা অবর্ণনীয়। কেবল ক্ষয়ক্ষতির কথা বলছিনে। নিকট আত্মীয়স্বজন নিহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে—তাদের ঘর-সংসার বিনষ্ট হয়েছে। তার চেয়েও বড় মানসিক বিপর্যয়। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্যস্থল বাঙালি পুলিশ বাহিনীর কেন্দ্র রাজারবাগ ছিল আমার মতিঝিল কলোনির একেবারে কাছে। সে রাতের বেপরোয়া হত্যাকাণ্ডে হাজার হাজার নিরীহ মানুষের ন্যায় সপরিবারে আমিও শেষ হয়ে যেতে পারতাম।

সে রাত্রির মৃত্যু পার হওয়ার মুহূর্ত থেকে একথা বুঝতে আমার অসুবিধা হয়নি যে ঢাকা শহরে থাকতে হলে প্রতিমুহূর্তেই মরতে হবে আর মৃত্যুর মধ্যেই থাকতে হবে। এ জেনেও সপরিবারে আর কোথাও কিংবা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার বাস্তব অবস্থা আমার ছিল না। আবার আমার স্ত্রী-কন্যা-পুত্র ক’টিকে রেখে বাঁচার চেষ্টা করলে আমি হয়তো মৃত্যুর আশঙ্কা থেকে কিছুটা রেহাই পেতাম, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই আমার অসহায় স্ত্রী-কন্যা-পুত্রদের ওপর হানাদারকে বর্বর অত্যাচার মুহূর্তের বিলম্ব ব্যতিরেকেই নেমে আসত। কাজেই মৃত্যুর মধ্যে অসহায় পরিবারের কাছে তাদের আগলিয়ে যতক্ষণ পারা যায় ততক্ষণ থাকা ছাড়া অপর কোনো কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এমনি অবস্থায় যেমন ইচ্ছা তেমন করে অপর কিছুসংখ্যক শিক্ষাবিদের নামের সঙ্গে আমার নামও হানাদার সরকার ব্যবহার করেছে।

কিন্তু আমার একটা বিশ্বাস ছিল—স্বদেশে কিংবা বিদেশে আমাকে যারা জানে সেই অন্তরঙ্গ বন্ধুজনরা আমায় ভুল বুঝবে না, আমার অসহায় অবস্থার কথা তারা এর মারফতেও উপলব্ধি করতে পারবে। এর মাস তিন পরে সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে একাডেমী থেকে পাকবাহিনী এসে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। তার পরে দেশ মুক্ত হওয়ার পরে ১৬ই ডিসেম্বর আমি ঢাকা জেল থেকে অপর হাজার হাজার বন্দীর সাথে বেরিয়ে আসতে পারলাম। তাই এই মহা হত্যার মধ্যে আমার বেঁচে থাকাটাই আকস্মিক ব্যাপার। কিন্তু থাক এ কাহিনী। হয়তো বলার দরকার নেই এর। এবং সংক্ষেপে একে বলাও যায় না। আমি জানি, আমার কোন চিঠি না পেলেও, আমার নিজের কোন বর্ণনা তোমাকে আমি না দিলেও আমার অবস্থা তুমি বুঝবে।

পেছনের কথা থাক। এবার বর্তমানের এবং আমার ব্যক্তিগত কিছু খবর তোমাকে জানানো আবশ্যক। ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে একাডেমীর চাকরি ছেড়ে আমি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি নিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন অনেক বড় হয়েছে। আসাদের স্মৃতির সে পরিবারসদৃশ বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা তার পরিমণ্ডল আর নেই। তবু ভাবলাম একাডেমীর কাজে পড়াশোনার তেমন সুবিধে পাইনে, কাজটাও এমন সংগঠনমূলক যে মনের উপর চাপ পড়ে বেশি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিবর্তিত হলেও শিক্ষকতার সুযোগ পেলে হয়তো একটু ভালো লাগবে। কিন্তু এমন ইচ্ছা থাকলেও আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা সম্ভব হোত না। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক সাহেবের আগ্রহে।

তিনি এখন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যক্ষ। তিনিই আগ্রহ করে আমাকে তাঁর নিজের বিভাগে একজন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অস্থায়ীভাবে নিযুক্ত করেছেন। আমার নিজের বিষয় অবশ্য এমনিতে দর্শন ছিল। কিন্তু রাজ্জাক সাহেব দর্শনের বদলে তাঁর বিভাগে যোগদানের উপরই জোর দিলেন। অধ্যাপক মুজাফফর চৌধুরী সাহেব বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলার। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশে গবেষণার জন্য আমাকে একটি বিদেশগমনের বৃত্তি দিতে চেয়েছে। এই বৃত্তির প্রস্তাবের পর থেকে তোমার কাছে চিঠি লেখার প্রয়োজন আমি আরও বেশি বোধ করছি। তুমি ঘর ছেড়ে ‘বিদেশীই’ হয়ে গেলে। তোমার সাহস ও সিদ্ধান্তের দৃঢ়তাকে মনে মনে অভিনন্দন না জানিয়ে পারিনি।

default-image

আমি তো সেই চিরকেলের নিরীহ। ’৪৭ সালে বিভাগের প্রাক্কালে শিক্ষা বিভাগ একবার ইংল্যান্ড পাঠাতে চেয়েছিলেন। আমি তার আভাস পেতেই তাদের কাছ ঘেঁষেও আর হাঁটলাম না। কিন্তু তখন তো ছিল এক মানসিকতা। কিন্তু আজ সাধারণভাবে চাকরি করে, পরিবার পরিচালনা করে সেই মানসিকতা রক্ষা করার ক্ষমতা কোথায়? তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যখন বিদেশ যাওয়ার সুযোগ দিতে চাচ্ছেন তখন তা প্রত্যাখ্যান করা সঙ্গত হবে না। কিন্তু যেতে হলেও আমার মানসিক ইচ্ছা, ইংল্যান্ডের কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করতে আসা। তার দুটি কারণ: প্রথম কারণ: তুমি আছ। তুমি থাকাতে আমার নিরুপায় বা অসহায়তার বোধ কম হবে। বিপদে আপদে প্রয়োজনে তোমার সাথীত্ব, পরামর্শ এবং সহায়তা পাবো। দ্বিতীয় কারণ, ইংল্যান্ডের সামাজিক ও আধ্যাত্মিক অর্থাত্ বুদ্ধিগত পরিবেশ হয়ত তত অপরিচিত কিংবা আমার গ্রহণের ক্ষমতার অতীত হবে না। এই দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত আমার একান্তই অনুমানের ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে তুমি আমাকে বলতে পারবে, আমি কি করব।

আমি শুনেছি যে সেপ্টেম্বরে-অক্টোবরের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সেশন শুরু হয়। আবার নাকি জানুয়ারিতেও একটা ভর্তির সুযোগ আছে। সেপ্টেম্বরের জন্য বিলম্ব হয়ে গেছে। জানুয়ারি সেশনে যাতে কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাই সে জন্য আমি গতকাল ইংল্যান্ডের ১. লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত School of African and Oriental Studies (SOAS), Malet Street, London WC1E 7HP ২. London school of Economics and political science, Houghton street, London WC2A 2AE এবং ক্যাম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটির কর্তৃপক্ষের নিকট ভর্তির ফর্ম পাঠাবার অনুরোধ জানিয়ে পত্র লিখেছি। তাদের কাছে লেখা পত্রের একটি তোমার কাছেও পাঠাচ্ছি।

আমার বিশেষ ইচ্ছা SOAS-এর সঙ্গে যুক্ত থেকে দক্ষিণ-এশিয়ার কোন সামাজিক রাজনীতিক সমস্যার উপর পড়াশোনা করব। কিংবা SOAS কিম্বা ক্যাম্ব্রিজ কিংবা Institute of Commonwealth Studies,—কোথায় কেমন করে আমি ভর্তি হতে পারব—তা আমি কিছুই জানিনে। বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে—ভর্তি হওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আমাকেই করতে হবে। ভর্তির অনুমতি সংগ্রহ করতে পারলে তারা আমাকে বৃত্তি দিবেন।

আমার চিঠি আজ আর দীর্ঘ করতে চাইনে। তুমি বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য না করলে বিশ্ববিদ্যালয় বৃত্তি দিলেও আমার মত লোকের পক্ষে এই বয়সে বিদেশ যাওয়া (বরঞ্চ বলি তোমার কাছে আসা) আদৌ সম্ভব হবে না। তোমার কথা মনে করেই মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি কথা দিয়েছি যে আমি ভর্তির চেষ্টা করছি। তুমি চিঠি লিখে আমাকে জানিয়ো আমি এখন আর কি করব। আমি যে চিঠি লিখেছি তার জবাবে হয়ত এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে ভর্তির ফর্ম পাঠিয়ে দেবে। তবু তুমি যদি তোমার কাজের মধ্যে সুযোগ করে অন্ততঃ SOAS-এর সঙ্গে কিংবা Institute of C.W. studies আমার জন্য প্রয়োজনীয় ভর্তির ফর্ম এবং ভর্তি হওয়ার আনুষঙ্গিক সংবাদ জানাও তাহলে আমার বিশেষ উপকার হবে। Institute of commonwealth Studies-এ অধ্যাপক মরিস জোনস (Professor W. H. Morris Jones) আছেন।

তিনি এশিয়ার ছাত্রদের তত্ত্বাবধান করেন। Institute of Commonwealth Studies (লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত)-এর তিনি পরিচালক বলে এই Institute-এর ’৬৯ সালের একটি রিপোর্টে দেখলাম। তুমি যদি তাঁর সঙ্গে একটু আলাপ করতে পারো এবং তিনি যদি আমার গবেষণার ব্যাপারে আমাকে তাঁর ছাত্র হিসেবে গ্রহণ করতে সম্মত থাকেন ও ভর্তির সুপারিশ করেন তাহলে ভর্তি হতে কোনো অসুবিধা হবে না বলে এখানকার সহকর্মীরা আমাকে বলেছেন। তার কাছে লেখা চিঠিখানির কপি তোমার জন্য পাঠালাম। সে যাহোক এ সম্পর্কে আমার চাইতে তুমিই ভাল বুঝবে।

রাজ্জাক সাহেবের পরামর্শ নিয়ে আমি আমার পড়াশোনার একটা বিষয়ও আপাতত: স্থির করেছি। বিষয়টি হচ্ছে: Evolution of nationalist ideas in Bengal during the 19th and earlier part of 20th centuries: among the people of Bengal, both Hindus & Muslims, Its characteristic features as revealed in contemporary publications, papers and autobiographical writings। অবশ্য বিষয়ের যে কোন পরিবর্তন করা যাবে না, এমন নয়। ভর্তির জন্য একটি বিষয় পূর্বাহ্নে স্থির করা আবশ্যক এবং তার একটি ক্ষুদ্র বিবরণ তৈরি করা প্রয়োজন বলে আমি এই বিষয়টি স্থির করেছি। তুমি একটু চিন্তা করে ফলপ্রসূ একটা বিষয়ের পরামর্শ আমাকে দিয়ো। আমার বিষয়ের একটি রূপরেখা বা Outline আমি তৈরি করেছি। তোমার চিঠি পেয়ে পরবর্তী ডাকে আমি তার কপি তোমার কাছে পাঠিয়ে দেবো। মোট কথা সমগ্র ব্যাপারটাতে আমি তোমার উপর বিশেষভাবে নির্ভর করছি।

বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের উপর তুমি একখানি বই লেখার পরিকল্পনা নিয়েছিলে। তার কতদূর হয়েছে? তোমার ওখানেই কি প্রকাশ করতে চাও না ঢাকাতে করবে। তোমার যদি পাণ্ডুলিপি তৈরি হয়ে থাকে তাহলে আমাকে লিখে জানিয়ো। আমি স্থানীয় প্রকাশকদের সঙ্গে বসবো। তুমি রাজি হলে এবং পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে দিলে এখান থেকে জানুয়ারির পূর্বেই অর্থাত্ আমার যদি ইংল্যান্ড যাওয়া সম্ভব হয় তাহলে তার পূর্বেই তোমার বই প্রকাশ সমাপ্ত করে আসা সম্ভব হবে। তুমি দেরী কোরো না। এরকম বই এখানে তেমন প্রকাশিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের উপর দু’একখানা বই কোলকাতা থেকে এবং পরে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তার অধিকাংশই সংগ্রামের কিছু কিছু রেখাচিত্রের সংকলন। তখন পরিকল্পনাটি কি রকম তা একটু বিশদ করে লিখো।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস রচনার একটি সরকারি পরিকল্পনার কথা কয়েকদিন আগে ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলা একাডেমীর তত্ত্বাবধানে এটি করা হবে বলে ঘোষণাটি করা হয়েছে। বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক হচ্ছেন ড. মযহারুল ইসলাম। তিনি পূর্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ ছিলেন। তোমার কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিশেষ করে বিদেশী পত্রপত্রিকার প্রতিক্রিয়ার মূল্যবান কাটিং আছে বলে জানিয়েছিলে। এগুলো এখনই বাংলা একাডেমীর কাছে পাঠিয়ে দেবার আবশ্যকতা নেই। সম্প্রতি ঘোষিত পরিকল্পনাটির বিস্তারিত বিবরণ জেনে তোমাকে বলব—কাটিংগুলো পাঠিয়ে দিলে তার উপযুক্ত ব্যবহার হবে কিনা। তুমি সেই যে তোমার একখানি পারিবারিক ছবি পাঠিয়েছিল সেখানা এখনো আমার সামনে আছে। কন্যাটি তোমার নিশ্চয়ই এখন অনেক বড় হয়েছে। ভাবী কেমন আছেন। মেয়েকে আমার স্নেহাশীষ দিও—ভাবীকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ো।

আমি যদিও তোমার চিঠির জবাব দিইনি তবু আজ বলছি, তুমি আমার চিঠির জবাব দিও—একটু তাড়াতাড়ি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্টের ঠিকানা লিখলেই হবে। তুমি আমার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জেনো। আমার স্ত্রী, মেয়েটি এবং ছেলে দুটি এক প্রকার আছে। মেয়েটি তোমার স্নেহশীর্বাদে এবার নবম শ্রেণীতে উঠেছে। বেশ একটু বড় হয়েছে। বাবা মার উপর এখন খবরদারি করে!

ইতি তোমার করিম।

সূত্র: ১৬ ডিসেম্বর, ২০০৮ সালের বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত