আমি যখন যুধ্যমান বাংলাদেশে, আমার মেয়ে পুপে তখন দক্ষিণ কলকাতার এক স্কুলে, প্রাইভেট স্কুল—ফাইনালের টেস্ট পরীক্ষা দিচ্ছিল।
ফিরে এসে বাড়িতে পুপের গল্প শুনলাম। হলে যখন একটি মেয়ে ঢুকছিল, তাতে ওরা আপত্তি করে। মেয়েটি ছুটে গিয়ে ওদের শাসায়—পরীক্ষার শেষ দিনে তোমাদের দেখে নেব। বন্ধুরা ঘাবড়ে গেলে পুপে তাদের সাহস দেয়, কিস্যু হবে না, ও হলো সপ্তম নৌবহর।
সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে গেল, আমি তখন যশোর-খুলনা রোডে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে। রেডিওতে খবর দিয়েছে মার্কিন সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে এসে ভিড়েছে। তখনো প্রচণ্ড লড়াই হচ্ছে দৌলতপুরে। ক্যাম্পে প্রত্যেকের মুখের দিকে তাকালাম। কেউ বিন্দুমাত্র ভয় পেয়েছে বলে মনে হলো না। কিন্তু রেগে আগুন হয়ে গেছে।
ভয় না পাওয়ার একটা কারণ ছিল। রেডিওতে বলেছিল, সোভিয়েতের নৌবহর ভারত মহাসাগরের দিকে যাত্রা করেছে।
পুপের গল্পটা শুনে খুব হেসেছিলাম। সপ্তম নৌবহর নিয়ে ঠাট্টা করার জন্যই শুধু নয়। আসলে এর মধ্যেও একটা ঢোকার ব্যাপার ছিল বলে। ধাড়ি নিক্সন নকল করছিলেন চীনকে।
পঁচিশে মার্চের ঘটনা যখন ঘটে, আমি আর সাজ্জাদ জহীর তখন উত্তর ভিয়েতনামের এক গ্রামে। হ্যানয়ে পা দেওয়ামাত্র ডক্টর শেলভাঙ্কর হোটেলে ফোন করলেন, খবর আছে। এক্ষুনি চলে এসো।
পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে শুনে আমি লাফিয়ে উঠলাম। কিন্তু খবরের একমাত্র সূত্র বিবিসি কিংবা ভয়েস অব আমেরিকা।
সাজ্জাদ জহীর উত্তর ভারতের লোক। প্রথম যৌবনেই ব্যারিস্টারি ছেড়ে সর্বক্ষণের কমিউনিস্ট কর্মী হন। দেশভাগের পর তিনি হয়েছিলেন পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সাধারণ সম্পাদক। আত্মগোপন করে থাকার সময় পাকিস্তানি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িয়ে পাকিস্তানি সরকার তাঁকে ফাঁসি দেওয়ার উপক্রম করেছিল। আন্তর্জাতিক মুক্তি আন্দোলনের জোরে ছাড়া পেয়ে তিনি ভারতে ফিরে আসেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবে, এ বিষয়ে আমরা ছিলাম নিঃসংশয়। সাজ্জাদ জহীর পশ্চিম পাকিস্তানকে হাড়ে হাড়ে চিনতেন। পূর্ব পাকিস্তান সম্বন্ধে আমারও কিছুটা জ্ঞান ছিল। তবে স্বীকার করতেই হবে, আমাদের বিশ্বাসের আরও একটা জমি ছিল। সে জমি উত্তর ভিয়েতনাম। একটা দেশের অধিকাংশ মানুষ স্বাধীনতা চাইলে দুনিয়ার সবচেয়ে জবরদস্ত শক্তিও তার কাছে হার মানে। আমাদের পায়ের নিচে ভিয়েতনামের মাটি, আমাদের চোখের সামনে ভিয়েতনামের মানুষই তার প্রমাণ।
আরও একটা ভরসা ছিল। সে ভরসা হলো সোভিয়েত দেশ। তারও প্রমাণ মিলেছিল ভিয়েতনামের মাটিতে। জানতে, বুঝতে, যাচাই করতে সময় লেগেছে, কিন্তু সময়মতো হাত বাড়াতে দেরি হয়নি।
ভয় কি পাইনি কখনো? বারবার পেয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস হারাইনি।
পেট্রাপোলের রাস্তায় যখন দেখেছি বাঁধভাঙা বন্যার মতো শরণার্থীরা আসছে, প্রায়ই ভেবেছি এবার আমরা ডুবে যাব। ডুবন্ত মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে উদ্ধারকারীও যেমন ডুবে যায় সেভাবে। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, প্রচুর নাকানিচুবানি খেয়েছি বটে, কিন্তু আমরা কেউই ডুবে যাইনি।
নবাগত শরণার্থীকে জিজ্ঞেস করেছি, কেন চলে এলে? বলেছে, মুসলমানেরা তাড়িয়ে দিয়েছে। সে লড়াইয়ের কথা গ্রামে থাকতে জানতে পারেনি, জেনেছে শিবিরে এসে। দেখেছে তারই মতো অন্য গ্রাম থেকে দলে দলে এসেছে সর্বস্ব হারিয়ে মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান। ধর্মের বাঁধনের জায়গা নিয়েছে ভাষার মেলবন্ধন।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধার ভয়ে আমরা কাঁটা হয়ে থেকেছি। প্ররোচনার অভাব হয়নি। কিন্তু তাতে কোথাও কোথাও বড়জোর দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। কিন্তু সবাই সজাগ থাকায় ঘটনা বেশি দূর গড়াতে পারেনি।
পেট্রাপোল শিবিরের সেই কর্মাধ্যক্ষের কথা ভুলব না। শরণার্থীর অন্তহীন ভিড়ে যখন নিজের স্নান-খাওয়াও মাথায় উঠেছে, তখন তিনি দেখালেন ক্যাম্পের ছাত্রদের জন্য যাতে বই-খাতার ব্যবস্থা করা হয়, তার জন্য ওপরে তিনি চিঠি লিখেছেন।
বললেন, ক্যাম্পে পড়ানোর মাস্টারের অভাব হবে না। তা ছাড়া আমরা যা খেতে দিই তাতে আধপেটও হয় না। কাজের মধ্যে থাকলে তবু ওরা খানিকক্ষণ খিদের কথাটা ভুলে থাকতে পারবে। তাঁর রিটায়ার করার প্রায় সময় হয়ে এসেছে। কাজ দেখিয়ে তাঁর চাকরির ভবিষ্যৎ ভালো হবে, সে আশাও ছিল না। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম এপারের মানুষকেও ছুঁইয়ে দিয়েছিল আগুনের স্পর্শমণি।
কলকাতার কত লোককে বলতে শুনেছি এই রিফিউজির দল কি ভাবছেন আর ঘাড় থেকে নামবে? ওরা কেউই আর ফিরে যাবে না।
সন্দেহ করা, অবিশ্বাস করা—এটা কিন্তু একবার বাতিক হয়ে গেলে সে রোগ সারানো মুশকিল।
মুক্ত অঞ্চলের গ্রামে শরণার্থীরা ফিরে যাচ্ছে—এ দৃশ্য আমি দেখে এসেছিলাম ভারতে পাকিস্তানের আক্রমণেরও আগে। ৩ ডিসেম্বর।
এরপর বারো থেকে সতেরোই সাতক্ষীরার রাস্তায়, শহরের অলিগলিতে দেখেছি সাইকেল-রিকশায়, ট্রাকের মাথায় লোক আসছে তো আসছেই। ঢাকা আর খুলনার মুক্তির পর ভয়-সংশয় ঘুচে গেছে। পুঁতে রাখা মাইন, অগ্নিদগ্ধ কিংবা ধূলিসাৎ ঘরবাড়ি, লুট হওয়া দোকানপাট আর আসবাবপত্র, বন্ধ স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত-সমস্যা অনেক।
সাতক্ষীরার গায়ে কুমোরপাড়ায় মাটির বাড়িগুলোর একটাও আর দাঁড়িয়ে নেই। সারা পূর্ব বাংলায় এদের তৈরি পুতুলেরই ছিল সবচেয়ে বেশি নামডাক।
গ্রামের রাস্তায় কালীপদ দের সঙ্গে দেখা। ঠিকাদারি করে তাঁর ভালো রোজগার ছিল। একতলা হলেও বেশ বাহারে দালান ছিল। এখন সেটা বিরাট একটা ইটের স্তূপ। দেখতে এসেছিলেন বাড়িতে ফেরা যাবে কি না। সাইকেল হাতে আনমনে শূন্য দৃষ্টিতে ফিরে যাচ্ছিলেন বসিরহাট। বললেন, ফিরে তো আসতেই হবে। কাজ-কারবার সবই তো আমার এখানে।
এক জোর বরাতের গল্প শুনেছিলাম মনিরামপুরে। একজন হিন্দুর একটা একতলা পাকা বাড়ি ছিল। পালিয়ে গেলে এক বিহারি সেটা দখল করে নেয়। পাকিস্তানি ফৌজ চলে গেলে ভদ্রলোক ফিরে এসে দেখেন এর মধ্যে তাঁর একতলা বাড়ি হয়ে গেছে তিনতলা। ইলেকট্রিক ছিল না, ইলেকট্রিক হয়েছে। জবরদখলকারী পাকিস্তানি ফৌজের সঙ্গেই তল্লাট ছেড়ে হাওয়া।
যশোরে থাকতে থাকতেই দেখছিলাম বেশ কয়েকটা বাড়ির বন্ধ জানালাগুলো একে একে খুলে যাচ্ছে।
একটু ভেতর দিকে এমন গ্রামও ছিল, যেখানে ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে দিয়ে হিন্দুবাড়িতে কর্তাগিন্নিরা থেকে গিয়েছিলেন। পাড়াপড়শিরা তাঁদের আগলে রেখেছিলেন। গ্রামের রাজাকাররাও তাঁদের গায়ে হাত দেয়নি।
একদিন সকালে দেখি থানার সামনে ট্রাকের ওপর বেজায় ভিড়। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আর বাড়ির বউঝি। একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কি সব বাড়ি ফিরে আসছে? বলল, আজ্ঞে না, এখানকারই লোক। মাথাপিছু তিন টাকা দিয়ে বনগাঁ দেখতে যাচ্ছে।
কলকাতায় আমি এমন লোক দেখেছি, যারা মানতেই চাইত না মুক্তিবাহিনীর অস্তিত্ব। কিংবা বলত, ওরা তো সব ইপিআর আর বেঙ্গল রেজিমেন্টের ভাড়াটে সৈনিক।
বড় রাস্তা আর গ্রামগঞ্জের পায়ে চলা রাস্তা দিয়ে দেখতাম পিলপিল করে কাতারে কাতারে ফিরে আসছে গেরিলা বাহিনীর লোকজন। খালি পা, গায়ে গেঞ্জি কিংবা শার্ট, পরনে লুঙ্গি কিংবা হাফপ্যান্ট। কাঁধে রাইফেল, হাতে স্টেনগান। বেশির ভাগই চাষি ঘরের ছেলে। ছাত্র কিংবা চাকুরে। যশোরের রাস্তায় দুজনের সঙ্গে দেখা। একজনের খুলনায় ছিল লন্ড্রি, আরেকজন ছিল স্কুলের ছাত্র। ‘জয় বাংলা’ বলে হাত বাড়িয়ে দিল। দুজনেরই হাতে খোসপাঁচড়ার দাগ। আমাকে আগেই একজন বলেছিল, খোসপাঁচড়ার দাগ দেখলেই বুঝবেন গেরিলা বাহিনীর লোক। পুষ্টিকর খাবার পায়নি, তার ওপর ময়লা, জলকাদার মধ্যে পড়ে থাকতে হয়েছে।
ত্রিমোহনীতে দেখা হয়েছিল আনিসুর রহমানের সঙ্গে। যশোরের এমএম কলেজে অর্থনীতি অনার্সের ছাত্র। বরণডালিতে বাড়ি। আনিসুরের দাদা ইসহাক ছিলেন সরকারি কৃষি ফার্মের চাকুরে। দিনে তাঁর হাতে থাকত কলম। রাতে তিনি মুক্তিসেনা-শত্রুদের লক্ষ্য করে অন্ধকারে তাঁর হাতে গর্জে উঠত বন্দুক কিংবা গ্রেনেড। ও অঞ্চল মুক্ত হওয়ার আগে কেউই সে খবর জানত না।
মুক্তিবাহিনীর আট নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর মঞ্জুরকে স্যালুট করে একগাল হেসে যে লোকটা সামনে এসে দাঁড়াল, তাকে দেখে কে বলবে যে এক বছর আগেও সে ডাকাত ছিল। তার নাম রাজ আলী দফাদার। ৫১ বছর বয়স। হাসলেই তার ক্ষয়ে যাওয়া দাঁতগুলো বেরিয়ে পড়ে। তার স্থাবর-অস্থাবর বিষয়সম্পত্তি প্রায় কিছুই ছিল না। থাকবে কী করে? সব সময় কি আর কাজ হতো? কিন্তু দলের লোকদের ১২ মাসই খাওয়াতে-পরাতে হতো। আর তা ছাড়া চারপাশে এত অভাবী লোক, চাইলে তো আর না বলা যেত না। রাজ আলী মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর ঠিক করেছে জীবনের বাকি দিনগুলো সৎ পথে থেকে তার ডাকাত নাম খণ্ডাবে।
খোর্দো গ্রামে আমাদের রাস্তায় আটকে ছিল গেরিলা বাহিনীর ছেলেরা। সরকারি মাল্টিপারপাসের অফিস ঘরে এখন মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি। পাকিস্তানি বাহিনী চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলের সব কাজ সম্মিলিতভাবে তারা চালাচ্ছে।
এ গ্রামের বীর কিশোর এখন মৈনুদ্দিন। একা ছয়জন শত্রুকে মেরেছে। তার মুখে চোখে কোথাও এতটুকু হিংস্রতা নেই। হাসিটা ভারি মিষ্টি। ক্লাস নাইনে পড়ত। নয়জন ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। খানেরা ওকে দিয়ে ইট বওয়াত। পয়সা তো দিতই না। একদিন ওকে সাত ঘা বাড়ি মারে। সেই দিনই সে বর্ডার পেরিয়ে চলে যায়। তার মনে হয়েছিল খান সেনাদের মেরে না তাড়ালে কিছুতেই তার মা-বোনদের ইজ্জত বাঁচবে না। মৈনুদ্দিনের ছিল এমন অসমসাহস যে পাকিস্তানি সেনাদের বাংকারে চড়াও হয়েও শত্রু ঘায়েল করতে তার বুক একটুও কাঁপেনি।
আমি যাদের সঙ্গে বাংলাদেশে দিন-রাত কাটিয়েছি, তারা অধিকাংশই ইপিআরের লোক। কেউ তাদের ভাড়াটে সৈনিক বললে সে অপমান আমার নিজের গায়েই বিঁধবে। রক্ষীদলে নাম লেখাতে হয়েছিল জমিজমার অভাবে, পেটের দায়ে। পাকিস্তানি বাহিনীতে, বাঙালি পুলিশ পল্টনকে দেখা হতো ছোট নজরে। জাত তুলে গালাগাল আর অপমান করা ছাড়াও অনেক অধিকার আর সুযোগ-সুবিধা থেকে তাদের বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। তাই স্বাধীনতার ডাক আসতেই যে যার বন্দুক নিয়ে তারা লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। জান দিতেও তাঁরা কসুর করেননি। মাইনে করা পুলিশ পল্টন স্বাধীনতাসংগ্রামের মন্ত্রবলে হঠাৎ যে কী আশ্চর্য চেহারার দেখা দিতে পারে, স্বচক্ষে না দেখলে তা বিশ্বাস করা শক্ত। হক, জাহাঙ্গীর, মজিদ, নূর ইসলাম—এমন সব মানুষকে নিয়ে বাংলাদেশের যে মুক্তিবাহিনী গড়ে উঠেছিল, সে মুক্তিবাহিনী পৃথিবীর যেকোনো সংগ্রামী দেশেরই গর্ব হতে পারত।
নতুন করে তৈরি হচ্ছিল কদমতলার ব্রিজ। মুক্তিবাহিনীরই তত্ত্বাবধানে। নায়েব সুবেদার আতাউর রহমান গল্প বলছিলেন, দলবল নিয়ে খান সেনাদের এই ঘাঁটিতে কবার কীভাবে তাঁরা অন্ধকারে হানা দিয়ে তাদের খতম করেছিলেন। বুলেটে হঠাৎ বেকায়দায় জখম হয়েছিল দিন পঁচিশ আগে। ভোমরা সেক্টরে সকাল সাড়ে নয়টায় ট্রেঞ্চ কাটার সময়। গুলি ডান দিক থেকে বাঁ দিকের পাঁজর ভেদ করে যায়। হাসপাতালে বলেছিল এক মাস শুয়ে থাকতে। কিন্তু দশ-বারো দিন পরেই ফিরে আসেন ইউনিটে। দলে লোক কম ছিল যে।
মাঠে মাঠে ছড়ানো বীভৎস মৃত্যুর মিছিল দেখার পর যশোরে অবাঙালিদের বসতি নিউ টাউনের পাশ দিয়ে আসছিলাম। দুপাশে খাঁ খাঁ করছে বাড়িঘর। হঠাৎ দেখি কয়েকটা পান-সিগারেট আর মুদির দোকান খোলা। দুটো গলিতে দেখলাম রোদ্দুরে ভিড় করে ছেলেমেয়েরা খেলছে। পোশাকে অবাঙালি বলে বোধ হলো।
শহরে এসে শুনলাম এখনো এখানে সেখানে অবাঙালিরা রয়ে গেছে। সেদিন বিকেলেই শহরের প্রধান সড়ক আরএন রোডের এক বস্তির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম হিন্দিতে কয়েকজন মেয়ে-পুরুষ কোমর বেঁধে ঝগড়া করছে। পাশ দিয়ে কোনো রকম ভ্রুক্ষেপ না করে দলে দলে রাস্তায় লোক হেঁটে যাচ্ছে। মুক্তিসেনাদের ঘাড়ে ঝোলানো রাইফেল।
এরপরও কি ভয় করতে হবে?
আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
সুভাষ মুখোপাধ্যায়: পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত কবি
সূত্র: ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সালের বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত