বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের ঘটনাবলি আমি আমার দিদিমা আরতি দেবীর কাছ থেকে শুনে উল্লেখ করছি:

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয়, তখন সবাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছিলেন। যুদ্ধের প্লেন যখন মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যায়, তখন তাঁর মা গোবর-পানি দরজায় ছিটিয়ে দিতেন। তখন দিদিমার পরিবার কোনোক্রমে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায়। তাঁর এক বোনের স্বামী দিনরাত পানির মধ্য দিয়ে অতিকষ্টে ভারত গিয়ে ওঠেন। তিনি এখন আর পৃথিবীতে নেই। দিদিমা যখন ভারতে গিয়ে ওঠেন, তখন আমার এক ছোট্ট মাসি তাঁর কোলে। তখন তাঁর রক্ত-আমাশয় শুরু হয়। সেখানে দিদিমার এক মেজ ছেলের খাদ্যের অভাবে নাড়ি শুকিয়ে যায়। এতে তিনি মারা যান। পরে তাঁরা শাকসবজি ফলিয়ে খাদ্য উত্পাদন করেন। ক্যাম্পে তাঁরা কলাপাতার মধ্যে পোড়া মরিচ দিয়ে পান্তা ভাত খেতেন। সেখানে অতিকষ্টে তাঁদের জীবন কাটে।

দিদিমার দুই ছেলে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। দাদু তাঁর ছেলেদের খুব ভালোবাসতেন। পুত্রের শোকে আমার দাদু প্যারালাইসড হয়ে যান। তিনি এখন আর হাঁটতে পারেন না। কথা বলতে পারেন না। দাদুর এ অবস্থার কথা শুনে দিদিমার এক আত্মীয় বাংলাদেশ থেকে অতিকষ্টে লুকিয়ে চিকিত্সক নিয়ে ভারতের ক্যাম্পে গিয়ে ওঠেন।

দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর তাঁরা সবাই নিজ দেশ ও নিজ বাড়িতে ফিরে এলেন। ফিরে এসে দেখলেন, সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে। পাঁচটি ঘরের মধ্যে মাত্র একটি ঘর আছে। সেটাও ভাঙা আর বাকি সবকিছু পাকিস্তানিরা পুড়িয়ে ফেলেছে। পোড়া ঘরের ওপর লালশাক ছিটানো ছিল। আশপাশের লোকজন সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে গেছে। এসব দেখে দিদিমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।

হঠাত্ সেখানে একজন মহিলা একটি হারমোনিয়াম নিয়ে উপস্থিত হলেন। দিদিমাকে ঘটনা খুলে বললেন, ‘পাকিস্তানিরা যখন সব ঘর পুড়িয়ে ফেলছিল, আমি তখন মাটির গর্তে বসে সবকিছু দেখছিলাম। পাকিস্তানি সৈন্যরা চলে যাওয়ার পর যখন আগুন নিভে গেল, তখন গর্ত থেকে উঠে এসে দেখি পেছনে একটা ভাঙা ঘর। সেটাতে একটি হারমোনিয়াম পেয়ে আমি রেখে দিলাম।’

থাকার জন্য ঘর নেই, শোবার জন্য বিছানা নেই। ধীরে ধীরে যখন মামা বড় হলেন, তখন কিছু উন্নতি হতে থাকে।

দ্রোনিতা দেবনাথ

চুনারুঘাট পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়

শ্রেণী: ষষ্ঠ, রোল: ৪

গ্রাম-হাতুণ্ডা, জেলা-হবিগঞ্জ