বিজ্ঞাপন
default-image

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাউথপুর গ্রামে বসবাস করেন মুক্তিযোদ্ধা এম এ হামিদ (৮২)। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজাপুর উপজেলা কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। যেমন সাহসী ভূমিকা, তেমনি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে নিরস্ত্র করেছিলেন পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসরদের। সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে মুক্ত করেছিলেন রাজাপুর উপজেলাকে। ঝালকাঠি সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে মুক্তিযোদ্ধা এম এ হামিদের গ্রামের বাড়ি রাজাপুর উপজেলার সাউথপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। এ সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন কাহিনির বর্ণনা করেন।

তত্কালীন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সুবেদার পদে চাকরি করতেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পশ্চিম পাকিস্তানের শিয়ালকোর্ট ক্যাম্প থেকে তিনি পালিয়ে আসেন। সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে আসায় রাজাপুরের তাঁর গ্রামের বাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তার পরও তিনি থেমে থাকেননি। ১৯৭১ সালের ১৫ নভেম্বর রাজাপুর থানা আক্রমণ করেন।

করেন। প্রথমে থানার সামনে ধানসিঁড়ি ক্লাবে গিয়ে আশ্রয় নেন তিনিসহ ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা। খবর পেয়ে তত্কালীন থানার ওসি হাবিবুর রহমানের নির্দেশে মুুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গুলি চালানো হয়। একটি গুলি তাঁর কানের পাশ দিয়ে সহকর্মীর হাতে এসে লাগে। এর পরই তিনি এলএমজি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন থানার সামনে। ভয়ে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন পুলিশের (তত্কালীন) দল। থানা থেকে পাওয়া অস্ত্র দিয়ে শুরু হয় যুদ্ধ। একের পর এক যুদ্ধ করে রাজাপুর থানা শত্রুমুক্ত করেন তাঁরা। রাজাপুরের বাইরেও তিনি ঘসিয়াখালীহাটে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। ঘসিয়াখালী গ্রামের পাশ থেকে বয়ে যাওয়া নদী দিয়ে ১৭টি নৌকা ও একটি গানবোর্ডে করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গুলি ছুড়তে ছুড়তে আসে। তখন তিনিসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা তাদের ঘিরে ফেলেন। এলএমজি দিয়ে ব্রাশফায়ার করেন মুক্তিযোদ্ধা এম এ হামিদ। একটি গুলি গিয়ে বিদ্ধ হয় গানবোর্ডের চালকের শরীরে। চালক নদীতে পড়ে গেলে গানবোর্ডটি তীরে এসে ওঠে। ওই গানবোর্ড থেকে নয়জন পাকিস্তানি হানাদারকে নিরস্ত্র করে আটক করেন মুক্তিযোদ্ধারা। নয়জনের মধ্যে তত্কালীন সেনাবাহিনীর সুবেদার খান বাহাদুরও ছিলেন।

এ রকমের নানা স্মৃতির কথা জানালেন মুক্তিযোদ্ধা এম এ হামিদ। মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজাপুর উপজেলা কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করলেও যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তিনি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারের দায়িত্বও পাননি। এ জন্য তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠনের পর তাঁকে ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ মনে করেন, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পরিবর্তন হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল একটাই, সেটা হলো স্বাধীন বাংলাদেশ। আমরা পতাকা ও স্বাধীন দেশ পেয়েছি। সরকারের উচিত অসহায় ও দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক দুরবস্থা থেকে মুক্তি দেওয়া।’

অনুলিখন: মো. আক্কাস সিকদার, ঝালকাঠি

সূত্র: ১৬ ডিসেম্বর, ২০১০ সালের বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত