বিজ্ঞাপন
default-image

’৭১ সালের ২০ এপ্রিল রাঙামাটির মহালছড়ির চিংড়ি খাল এলাকায় যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হন মুন্সী আবদুর রউফ। তাঁর ছোট চাচা মুন্সী মোতালেব হোসেন নিজের ছেলে আইয়ুব আলীকে আবদুর রউফের মা মুকিদুন্নেছার হাতে তুলে দেন। সেই থেকে আইয়ুব আলীই তাঁর সন্তান। এখন ফরিদপুরের আড়পাড়া গ্রামে বিডিআরের দেওয়া বাড়িতে আইয়ুব আলীর সঙ্গেই থাকেন মুকিদুন্নেছা।

আবদুর রউফের জন্ম কিন্তু এই আড়পাড়ায় নয়। তাঁর জন্ম ফরিদপুরের বোয়ালমারীর কামারখালী ইউনিয়নের সালামতপুর গ্রামে, ১৯৪৩ সালের ৮ মে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে ’৬৩ সালের ৮ মে তিনি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর) সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। ছোট চাচা মুন্সী মোতালেব হোসেন ইপিআরে চাকরি করতেন। তিনিই আবদুর রউফকে ইপিআরে ভর্তি করে দেন।

এই সালামতপুর গ্রামেই ১৭ নভেম্বর স্থাপন করা হলো বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর। ৬২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে ফরিদপুর জেলা পরিষদ ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। বীরশ্রেষ্ঠর পরিবারের ৫২ শতাংশ ও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ স্মৃতি পরিষদের মাধ্যমে এলাকাবাসীর দেওয়া ৪৮ শতাংশ, মোট এক একর জায়গায় চলছে গ্রন্থাগার ও জাদুঘর নির্মাণের কাজ।

default-image

মুকিদুন্নেছার একান্ত আগ্রহে তিন বছর আগে গঠিত এই স্মৃতি পরিষদ স্থানীয়ভাবে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুুর রউফের জন্ম এবং শাহাদতবার্ষিকী পালনের পাশাপাশি সালামতপুর গ্রামে স্মৃতি জাদুঘর তৈরির আন্দোলন ও জায়গা দেওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করেছে। বর্তমানে তারা কামারখালী বাজারে ঢুকতে রাস্তার বাঁ পাশে সওজের পরিত্যক্তপ্রায় ৫০ শতাংশ জায়গায় বীরশ্রেষ্ঠের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত কামারখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের জরুরি চিকিত্সার জন্য সওজের অব্যবহূত ডাকবাংলো চত্বরে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফের নামে ২০ শয্যার একটি হাসপাতাল (ট্রমা সেন্টার) প্রতিষ্ঠা এবং ফরিদপুর স্টেডিয়ামকে জাতীয় স্টেডিয়ামে উন্নীত করে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফের নামে করার জন্য জনমত গঠন ও সরকারের দৃষ্টি আর্কষণের জন্য কাজ করছে। আর এ কাজে তাদের সার্বক্ষণিক উত্সাহ জুগিয়ে যাচ্ছেন মুকিদুন্নেছা।

ফরিদপুর জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মৃদুলকান্তি ঘোষ জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের কাজ আগামী মার্চ মাসে শেষ হবে। স্বাধীনতার মাসেই এটির উদ্বোধন করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বীরশ্রেষ্ঠর বাল্যবন্ধু ও তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর পরিচালনার জন্য সরকারি লোক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। নির্মাণকারী সংস্থার পক্ষ থেকে এটিকে স্থানীয়ভাবে পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সরকারি লোকবল না থাকলে পাঠাগারটির যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন আজহার।

আড়পাড়ার বাড়িতে আলাপকালে মুকিদুন্নেছা জানালেন, ‘শেয়াল-কুকুরের মতো পালিয়ে না মরে দেশের জন্য, মানুষের জন্য বীরের মতো মৃত্যুবরণ করেছে আমার ছেলে। ছেলে হারানোতে তাই কোনো কষ্ট নেই। এক ছেলের বদলে লাখো ছেলে পেয়েছি।’

বীরশ্রেষ্ঠর পরিবারকে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে মাসে সাড়ে সাত হাজার এবং বিডিআরের পক্ষ থেকে এক হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। নিজের জন্য তাই আর কিছুই চান না এই বীরগর্ভা। তবে স্মৃতিস্তম্ভ, ট্রমা সেন্টার এবং স্টেডিয়ামের নামকরণে এলাকাবাসীর দাবি পূরণ হলে তিনি খুশি হবেন বলে জানান।

সূত্র: ১৬ ডিসেম্বর, ২০০৭ সালের বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত