বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭০–এর দশকে তথ্যপ্রযুক্তির কোনো বালাই ছিল না। পৃথিবীর এক প্রান্তে কোনো ঘটনা ঘটলে সে খবর অন্য প্রান্তে যেতে অনেক সময় লাগত। ঢাকার পত্রিকা মফস্বলে পৌঁছাত এক দিন পর। সংবাদ পাঠানো বা সংগ্রহের মাধ্যম ছিল ডাক, টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ বার্তা।

সেই দুর্গম সংবাদপ্রবাহের যুগেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের খবরটি দ্রুত দেশের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশ্ববাসী গণমাধ্যমের সুবাদে পাকিস্তানিদের নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের সমাচার জানতে পেরেছিল।

সব ঘটনার পেছনে যেমন কার্যকারণ থাকে, তেমনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণেরও একটা পটভূমি আছে। সত্তরের ১২ নভেম্বর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়, যা ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি মানবসংহারী প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সেই ঘূর্ণিঝড়ের খবর সংগ্রহ করতে অনেক বিদেশি সাংবাদিক বাংলাদেশে এসেছিলেন। নির্বাচনের পূর্বনির্ধারিত তারিখ ছিল ১০ ও ১৭ ডিসেম্বর। অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানালেও আওয়ামী লীগের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজি হননি। তিনি মনে করতেন, নির্বাচন একবার পেছানো হলে পাকিস্তানিরা আর ওমুখো হবে না। বাঙালির দাবি আদায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।

এ সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে অখণ্ড পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম ও শেষ সাধারণ নির্বাচন নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুরো পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। পাকিস্তানিরা বাঙালির হাতে ক্ষমতা ছাড়বে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। ইয়াহিয়া খান ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করলে পুরো বাংলাদেশ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। বাঙালির দাবি তখন আর স্বায়ত্তশাসনের মধ্যে সীমিত থাকেনি, অগ্রসর হতে শুরু করে পূর্ণ স্বাধীনতার দিকে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর রাজনৈতিক দুর্যোগ আঁচ করতে পেরে মার্চেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের অনেক প্রতিনিধি ঢাকায় আসেন এবং তাঁরা নিজ নিজ সংবাদ সংস্থা, পত্রিকা ও রেডিওতে খবর পাঠান। আর দেশের ভেতরের সংবাদপত্রগুলো হয়ে ওঠে আন্দোলন-সংগ্রামের মুখপত্র। বস্তুত দেশের সংবাদপত্রগুলো সাধারণভাবে বাঙালির আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন কিছুটা আগে থেকেই ঘটাতে শুরু করেছিল। এবার সরকারনিয়ন্ত্রিত বেতার-টিভিও আন্দোলনের সহযাত্রী হয়। রেডিওতে হঠাৎ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার বন্ধ করে দিলে বেতারকর্মীরা ধর্মঘটে নামেন। বন্ধ হয়ে যায় সম্প্রচার। পরদিন সরকার ভাষণ প্রচার করতে রাজি হলে তাঁরা কাজে ফিরে আসেন।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ রাতে যে বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর গণহত্যা চালায়, ঢাকা শহরকে অগ্নিকুণ্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়কে কসাইখানায় পরিণত করে, পশ্চিমের পাঠক সেই খবর ৩০ মার্চ প্রথম জানতে পারে লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ-এ সাইমন ড্রিংয়ের প্রতিবেদন পড়ে। শিরোনাম ছিল, ‘ট্যাংকস ক্রাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান’। এই চাক্ষুষ রিপোর্ট ছিল পাকিস্তানিদের নৃশংসতার অকাট্য দলিল।

বন্দুকের মুখে যখন বিদেশি সাংবাদিকদের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আটক করা হয়, সাইমন ড্রিং ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের আলোকচিত্রী মাইকেল লরেন্ট হোটেলের ছাদে আশ্রয় নিয়ে বহিষ্কারের হাত থেকে রেহাই পান। ২৭ মার্চ কারফিউ তুলে নেওয়া হলে তাঁরা দুজনই শহরে বেরিয়ে পড়েন। সাইমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খবর সংগ্রহ করেন, মাইকেল ছবি তোলেন। করাচি ফেরার পথে তল্লাশির হাত থেকে সাইমন তাঁর নোটবইটি লুকিয়ে রাখেন। পরে করাচি থেকে ব্যাংককে গিয়ে পাকিস্তানিদের নৃশংসতার খবর পাঠান। মাইকেল ছবিগুলো আগেই জার্মান দূতাবাসের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

৫ এপ্রিল নিউজউইক-এ প্রকাশিত হয়, ‘পাকিস্তান প্লাঞ্জেস ইনটু সিভিল ওয়ার’, ১২ এপ্রিল টাইম ম্যাগাজিন পূর্ব পাকিস্তানে হত্যাযজ্ঞ ও গণকবরের বিবরণ প্রকাশ করে। ১৯ এপ্রিল নিকোলাস টোমালিন ডেইলি টেলিগ্রাফ-এ লেখেন, ‘ফার ফ্রম দ্য হলোকস্ট’।

৯ মাস ধরেই বিশ্ব গণমাধ্যমের মনোযোগের প্রধান ক্ষেত্র হয়ে ওঠে পাকিস্তানিদের নৃশংসতা এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতিরোধযুদ্ধ। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। একজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা বিদেশি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আমরা যখন আমাদের দেশের মানুষকে মারতে পারছি, তখন তোমাদেরও মারতে পারব।’

সংবাদের দ্বিতীয় ক্ষেত্র ছিল মুজিবনগর ও মুক্তাঞ্চল। সেখানে সাংবাদিকেরা অবাধে যেতে পারতেন। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে ভারতের বাইরের অনেক সাংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন। এপ্রিল-মের মধ্যে লাখ লাখ শরণার্থী দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। আশ্রয়শিবিরে কিংবা পথে তাদের দুঃখ-দুর্দশার কাহিনি প্রকাশ পেতে থাকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।

২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের পরই বাঙালি যে যেখানে ছিল, সেখান থেকেই প্রতিরোধযুদ্ধে শামিল হয়। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র তখনো মুক্ত ছিল। বেলাল মোহাম্মদের নেতৃত্বে কয়েকজন বেতারকর্মী তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র চালুর ঘোষণা দেন। তাঁদের উদ্যোগেই ২৬ মার্চ আওয়ামী লীগের নেতা এম এ হান্নান ও ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। ৩০ মার্চ পাকিস্তানিরা চট্টগ্রাম দখল করে নিলে ওই বেতারের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ত্রিপুরার আগরতলায় দ্বিতীয় দফা সম্প্রচার চালু করা হলেও তা স্থায়ী হয়নি। তৃতীয় দফায় ২৫ মে মুজিবনগর থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার শুরু হয় এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল।

অবরুদ্ধ বাংলাদেশে সরকারের অনুগত যেসব পত্রিকা বের হতো, সেসবের খবর কেউ বিশ্বাস করত না। বাইরের পত্রিকা আসার সুযোগ ছিল না। তাই সবাই উন্মুখ হয়ে থাকত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, আকাশবাণী, বিবিসি প্রভৃতি রেডিওর খবরের জন্য। অনেকে সন্ধ্যায় ঘরের আলো নিভিয়ে রেডিও চালু করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনতেন। তখন শুধু খবর প্রচার নয়, শোনার ওপরও পাকিস্তান সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সংবাদের বাইরে জনপ্রিয় ছিল দেশাত্মবোধক গান, জল্লাদের দরবার (নাটক) ও চরমপত্র। সাংবাদিক এম আর আকতার মুকুল ছিলেন চরমপত্রের রচয়িতা ও বয়ানকারী। সাধু, চলতি ও আঞ্চলিক ভাষার মিশেলে তাঁর পরিবেশনা ছিল অনবদ্য।

ডিসেম্বরে যখন পাকিস্তানিরা বিভিন্ন স্থান থেকে পিছু হটছিল, সেই ঘটনার বর্ণনা তিনি দিয়েছিলেন এভাবে:

মেজিক কারবার। ঢাকায় অখন মেজিক কারবার চলতাছে। চাইরো মুড়ার থনে গাবুর বাড়ি আর কেচ্কা ম্যাইর খাইয়া ভোমা ভোমা সাইজের মছুয়া সোলজারগুলা তেজগাঁ-কুর্মিটোলায় আইস্যা-আ-আ-আ দম ফালাইতাছে। আর সমানে হিসাবপত্র তৈরি হইতাছে। তোমরা কেডা? ও-অ-অ টাঙ্গাইল থাইক্যা আইছ বুঝি? কতজন ফেরত আইছ? অ্যাঃ ৭২ জন। কেতাবের মাইদে তো দেখতাছি লেখা রইছে টাঙ্গাইলে দেড় হাজার পোস্টিং আছিল। ব্যস ব্যস, আর কইতে হইব না—বুইজ্যা ফালাইছি। কাদেরিয়া বাহিনী বুঝি বাকিগুলার হেই কারবার কইর্যা ফালাইছে। এইডা কী? তোমরা মাত্র ১১০ জন কীর লাইগ্যা? তোমরা কতজন আছলা? খাড়াও খাড়াও, এই যে পাইছি। ভৈরব-১,২৫০ জন। তা হইলে ১,১৪০ জনের ইন্না লিল্লাহি ডট ডট ডট রাজিউন হইয়া গেছে। হউক কোনো ক্ষেতি নাই। কামানের খোরাকের লাইগ্যাই এইগুলারে বঙ্গাল মুলুকে আনা হইছিল। রংপুর-দিনাজপুর, বগুড়া-পাবনা মানে কিনা বড় গাংয়ের উত্তর মুড়ার মছুয়া মহারাজ গো কোনো খবর নাইক্যা। হেই সব এলাকায় এক শতে এক শর কারবার হইছে। আজরাইল ফেরেশতা খালি কোম্পানির হিসাবে নাম লিখ্যা থুইছে।

ভারতের গণমাধ্যমগুলো ২৭ মার্চ থেকেই পাকিস্তানিদের নৃশংসতা ও বাঙালির প্রতিরোধযুদ্ধের খবর প্রকাশ ও প্রচার করে আসছিল। এ ক্ষেত্রে কলকাতা ও আগরতলার বাংলা পত্রিকাগুলো অগ্রণী ভূমিকা নেয়। ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চলে গিয়ে সরেজমিন রিপোর্ট করেছিলেন প্রখ্যাত কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। অন্নদাশঙ্কর রায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, আবু সাঈদ আইয়ুব, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো লেখক-কবিরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কলম ধরলেন। কলকাতা প্রেসক্লাবের এক সাম্প্রতিক প্রকাশনা থেকে জানা যায়, অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে দীপক মুখোপাধ্যায় ও সুরজিৎ ঘোষাল নামে দুই তরুণ সাংবাদিক চিরতরে হারিয়ে যান।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পরই জনপ্রিয় ছিল বিবিসি ও আকাশবাণী। বিবিসির প্রখ্যাত সাংবাদিক মার্ক টালি যুদ্ধের সময় ঢাকায় আসেননি। বেশির ভাগ সময় দিল্লি থেকেই সংবাদ পাঠাতেন। কিন্তু তাঁর পরিবেশনার ধরন দেখে মনে হতো তিনি ‌একজন প্রত্যক্ষদর্শী। আর অকাশবাণীতে দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভরাট কণ্ঠে সংবাদ পর্যালোচনা ছিল অত্যন্ত হৃদয়কাড়া।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের অবস্থান ছিল ন্যায় ও মানবিকতার পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, সেসব দেশের গণমাধ্যমও পাকিস্তানিদের গণহত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। অনেক ক্ষেত্রে তারা রাষ্ট্রীয় নীতি পরিবর্তনেও সহায়ক ভূমিকা নিয়েছে। নিক্সন–কিসিঞ্জার চক্র পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ সিনেটর ও প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য যে পাকিস্তানের বিরোধিতা করেছিলেন, তারও পেছনে গণমাধ্যমের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। মার্কিন গণমাধ্যমে পাকিস্তানিদের নিষ্ঠুরতার খবর ছাপা হওয়ার পরই জনপ্রতিনিধিরা বাংলাদেশের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।

পাকিস্তানি শাসকেরা বিশ্ববাসীর চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করেও পারেননি। তাঁদের কৃতকর্ম গণমাধ্যমকর্মীদের কারণে ফাঁস হয়ে যায়। মার্চে সব বিদেশি সাংবাদিককে বের করে দেওয়ায় প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়ে দেশটি। এরপর সরকার এপ্রিল মাসে আটজন বিদেশি সাংবাদিককে ঢাকায় নিয়ে আসে। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে সবকিছুই স্বাভাবিক আছে, সেটি দেখানো। কিন্তু লন্ডনে ফিরে সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস সানডে টাইমস–এ লেখেন ‘জেনোসাইড’ বা ‘গণহত্যা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন। সাংবাদিকের চোখে যেটি গণহত্যা, সেটিই পাকিস্তানিদের চোখে স্বাভাবিক অবস্থা। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এর সিডনি শ্যনবার্গ, ইতালির ওরিয়ানা ফালাচি, ফ্রান্সের বের্নার–অঁরি লেভিসহ অনেক বিদেশি সাংবাদিক–লেখক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তুলেছিলেন। গণমাধ্যম যেন হয়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট।

গণমাধ্যমের কাজ সত্য অনুসন্ধান। জনগণকে সঠিক তথ্য জানানো। জবরদখলকারী পাকিস্তানি শাসকেরা সেই সত্য আড়াল করতে চেয়েছিল। তারা দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করতে মিথ্যা প্রচারণা চালায়। সেনাবাহিনীর গণহত্যা, গণধর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞের খবর যাতে কোনো গণমাধ্যম প্রকাশ করতে না পারে, সে জন্য তারা কঠোর সেন্সরশিপ আরোপ করে। তারপরও সত্য গোপন করা যায়নি, ঢাকা যায়নি অপকর্ম। এটাই ছিল সে সময়ের গণমাধ্যমের শক্তি।

গণমাধ্যম সব দেশে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। তবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসকেরা নিরীহ বাঙালি জনগোষ্ঠীর অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ায় এর ভূমিকা হয়ে উঠেছিল আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গণমাধ্যমের শক্তি সত্যিকারভাবে বুঝতে পেরেছিল, যখন তারা আত্মসমর্পণের দলিলে সই করতে বাধ্য হয়।

সোহরাব হাসান কবি ও সাংবাদিক

সূত্র: ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সালের বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত